COVID-19 সোনার বাংলা:
Some Heartfelt Writings
The COVID-19 pandemic was first confirmed in the state of West Bengal on 17 March 2020 in Kolkata. The Health and Family Welfare Department of Government of West Bengal confirmed a total of 15,120 COVID-19 deaths as of 28 May 2021. We dedicate this bulletin to our lost friends and family members.
COVID-19: India's Holiest river is swollen with dead bodies
BBC News
সহজে ডোবে না দেহ। শুধু জানি আমার ভাষায় জীবনাবসান বললে মৃত্যুর ওজন বেড়ে যায়।
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়
থাকা তো অছিলা মাত্র। না-থাকা ভরিয়ে দিতে আসি। জীবন কিছুই নয়। মৃত্যুর পরের স্মৃতিরাশি।
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়
In remembrance of the lost ones in COVID-19, we are including this song in our prayer, written by Srijato Bandyopadhy, sung by Arijit Singh and music composed by Indradip Dasgupta.
দশজন ছেলে মিলে কাজ করতে গেলে পরের সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে তিনজন। কারণ তাদের ভ্যাকসিন নেই। সেই তিনজনের জায়গায় নবজন্ম নিচ্ছে আরও নতুন তিনজন। আর আমাদের মতন অগুন্তি ঘরছাড়ার দল কাঁটাতারের বেড়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়েও বাংলার জন্য পাঠিয়ে চলেছি ত্রাণ। স্বার্থ একটাই, শিকড়কে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ.....
পজিটিভ নয়! উপলব্ধিতে উদ্বর্তী বঙ্গভূমি~~
সুষ্মিতা রায়চৌধুরী Susmita Roychowdhury
“বাংলা তুমি কার? যে আছে তার না যে রাখে তার”? প্রশ্নটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে রোজ। যখন অস্তমিত সূর্যের রঙে নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ইমারতগুলোকে দেখে মনে হয় “এল ডোরাডো” কল্পনায় দৃশ্যায়মান, তখনই প্রাণের “সোনার শহর”-এ বাস্তবে মৃত্যুমিছিলের হাহাকার। একলা সত্তরের চিন্তায় ছটফট করে ওঠে সুসজ্জিত ভালো থাকার প্রলেপ। যে সংক্রমণে বিশ্বের প্রথম সারীর দেশের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙ্গে যায় তাসের ঘরের মতন, সেখানে কিভাবে রক্ষা পাবে গরীব দেশের জনসমুদ্র? তখনই খবর আসে, জাতীয় স্তরে ফুটবল খেলোয়াড়, পাড়ার দাদা প্রাণ হারিয়েছে
মারণরোগে। বয়স মাত্র তিরিশ, নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুস্থ তারুণ্যও তাহলে নিরুপায় এবার। আসলে রাজতন্ত্রে ভ্যাকসিন পৌছয় না সাধারণের কাছে। গরীবদের ভাত-কাপড়ের লোভ দেখিয়ে অনায়াসে ভোটতন্ত্রে সামিল করা যায়, কিন্তু “আপনাদের” কোন অভাব যে “ভোট-পুজো”য় মেটে তা আজও অজানা।
যেদিন আবার সব শান্ত হবে, সেদিন ফুটপাথে ভাত ছেটানো কাকের দলের পাশে রাস্তার বাচ্চাটার উলঙ্গ শরীর দেখলে,
গাড়ীর কাঁচটা তুলে দেবেন প্লিজ। কারণ ফেসবুকের স্টেটাসে “ফুল লকডাউন হলে গরীবরা খাবে কি” ভন্ড বিপ্লবের ঝড় তোলার আগে, একবার নিজেদের বিবেক বোধে কড়া নাড়লে দেখবেন আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী আপনারাই। আপনারা যারা শিক্ষিত অভদ্র।
রাজনৈতিক চক্রব্যুহের শেষ দানে তাই বোড়ে এগিয়ে দিয়ে কিস্তি টানলেন প্রশাসন। শবদাহের কালো ধোয়া যখন কুন্ডলি পাঁকিয়ে উঠছে আকাশের দিকে তখন হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় সাতবছর আগের রাজনৈতিক তঞ্চকতা!
ওদিকে অক্সিজেন না পেয়ে অনাথ হচ্ছে শৈশব, এদিকে নিজেদের প্রিয় নেতার গ্রেপ্তারে লকডাউন পরোয়া না করে জটলা পাকাচ্ছে অন্ধভক্ত। কালোবাজারির “রেফারেন্স”-এ তখন ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম মধ্যবিত্তের ধরা-ছোয়ার
বাইরে। এমন সময় শিউড়ে উঠি নবজাতকের কান্নায়। করোনার গ্রাসে পড়ছে শিশুরাও! চালসে দুটো সাধারণ চোখ টিভির সামনে বসে ভাবছে, তাহলে কি এবারই মৃত্যু!
কিন্তু যখন পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে তখনই জন্ম নেয় ঈশ্বর। মহাজাগতিক শক্তির একমাত্র কান্ডারি যে দেবতা তার কোনও মন্দির মসজিদ নেই, নেই কোনও রঙ। সফেদ বর্হিবাসে বৈজ্ঞানিক আশ্বাস আসে, “বিধিনিষেদ মানলে আবারও বাঁচবে প্রাণ”।
দিনরাত কঠিন বর্মে, মাস্কের আভরণে লড়াই করে চলেছেন যে ঈশ্বর, তাদের পোশাকি নাম ডাক্তার, নার্স। সরবরাহ কম, কখনও অজিতের মুখ থেকে অক্সিজেনের নল সরিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে আতিফ, কখনও স্যাচুরেশন লেভেল একটু ঠিক হলে বিছানা ছেড়ে দিয়ে মাটিতে নেমে বসছে অজয়বাবু, বিছানা ছেড়ে দিচ্ছে তার থেকে বেশি মুমুর্ষদের জন্য। প্রত্যেকটি ঈশ্বরের একটি যোদ্ধা থাকে। তৈরি হয় চেতনার-বোধোদয়ের এক যুদ্ধ।
বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠি করে বানিয়ে ফেলা হয় সেফ হাউস। দুর্দান্ত বৃষ্টি, কাঠফাঁটা রোদ অগ্রাহ্য করে ভারী অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে করে পৌঁছে যায় তারা দুস্থদের বাড়িতে। বাইক তখন পক্ষীরাজ আর মানুষের সেবাই তখন মুলমন্ত্র। মান-হুশের
অবক্ষয় এখনও পুরোপুরি হয়নি। কতজন ডাক্তার প্রাণ হারিয়েছেন এই মহাযজ্ঞে তার সঠিক সংখ্যা আমার জানা নেই। দশজন ছেলে মিলে কাজ করতে গেলে পরের সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে তিনজন। কারণ তাদের ভ্যাকসিন নেই। সেই তিনজনের জায়গায় নবজন্ম নিচ্ছে আরও নতুন তিনজন। আর আমাদের মতন অগুন্তি ঘরছাড়ার দল কাঁটাতারের বেড়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়েও বাংলার জন্য পাঠিয়ে চলেছি ত্রাণ। স্বার্থ একটাই, শিকড়কে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ। বছর বছর ঝড় আসে সুন্দরী বাংলায়। কখনও আমফান, কখনও ইয়াশ, কখনও বা অজানা “মিউকোরমাইকোসিস” বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বছর বছর ভাঙ্গে সুন্দরী বাংলার বুক। তছনছ হয় সমুদ্র উপকুল, ভেসে যায় ঘরবাড়ি। টিনের চাল তো বুঝতেই পারে না, কোনটা বেশি দুর্বিষহ! না খেতে পেয়ে মরা নাকি করোনার প্রকোপে! তার আগেই বানভাসি হয় ত্রিপল ঘেরা ছেঁড়াফাটা সংসার। ভয় আর অসহায়তা এখন দুটোই সমান্তরাল এবং গা সওয়া। জন্ম নেয় ক্রোধ, যখন দেখি নেশা করার জন্য ভীড় করে সংক্রমণ বাড়ায় অশিক্ষিতর দল। যখন মূর্খ লোকাচার রক্ষায় মারা যায় সদ্য বিবাহিত কনে। মনে হয় চার দেওয়ালের রক্ষাকবচে আটকে রাখি পরিবারকে। কিন্তু আর্থারাইটিসের রুগী কঁকিয়ে বলে ওঠে, “কাজের মেয়ে না এলে যে মরে যাব রে”। তবুও আশা রাখি সেই ঈশ্বর আর তার যোদ্ধাদের ওপর। অবসাদ নয় অন্তরমহলে জন্ম নেয় ধ্বনাত্বক চিন্তাধারা। সংক্রমণের কার্ভ নামতে বাধ্য। লড়াইটা কঠিন কিন্তু প্রকৃতি – সমাজের রুদ্ধশ্বাস দাবানলে, একদিন সুচি হবে মনুষ্যধর্ম। সেদিন শুধু বঙ্গভূমিতে রাশটা টানতে জানলেই সবরকম ভাইরাসের বিরুদ্ধে সাধারণের কিস্তিমাত অনিবার্য।।
আহত
মৌমন মিত্র Moumon Mitra
আমি কি অক্ষরবিন্দুর জালে
পৃথিবী ভেবেছি কোনওদিন ? রুক্ষ দেয়ালের সাজ
গন্ধ মদের ষষ্ঠ কান্না চিরে যে
চাকার দলিত অস্তিত্ব কুড়োতে চেয়েছি শেষে?
ভেবেছি আর যতদূর জানালার ভূ গলি ?
গতিপথ বদলে নিচ্ছি অহরহ মানচিত্রের উপর
মধ্য রাত্রের কবর খোঁড়ার ধাতু বিষাদ নিংড়ে
দেখেছি তত দেহ থেকে বার হয়েছে হিম মাংস
একবার চেতনা যখন স্থির করে তা
এভাবে যা যত রক্তনদী ধারা অবিকল
এভাবে পোড়া আগুন ও মরুভূমি পর পর
রন্ধ্রে ঝরে গেছে–মনে হয়– হাঁটুভর শূন্য ত্রাণ
লক্ষ ব্যর্থ কাগজের ধারে সর্বস্বতা
খোদাই করেছি ‘পড়ে থাকা’ রাস্তার অতিক্রম
কেবলই উঠেছে জেগে মৃত্যুর পাণ্ডুলিপি,স্বর
না-খাওয়া প্রবল হাত-পা বুক উদর
ছন্নছাড়া ক্ষুধার পিঠে একা একা
বাঁ ডান ঘুরছে যা কিছু কাচের ঢাকা ফুসফুস
কারা পেলো ? কীই-বা হারালো ?
জলে আঁকা সংকট সেঁকা রুটির গায়ে পৌঁছয় না
অস্থি ও ধুনুচির ভেতর অতি গভীর
নিভে গিয়ে আছাড় মারে আহত ধূসর
এত ঘন মেঘ করে বৃষ্টি শুরু হল, তার-ই
৪টি ছোট ভাবনা
অলকেশ দত্তরায় Alokesh Duttaroy
এক
রাত্রে যে ছিল, সকালে সে আর নেই
ফেসবুকে শুধু অসহায় লেখা এই ….
দুই
পৃথিবী মানুষ মেঘ রোদ বালি জল
আয় আরো বেঁধে বেঁধে বেঁচে থাকি চল….
তিন
এই মেঘ এই আকাশ, গ্রহ
এই মাটি এই গাছ জল
এটুকুই জীবনের মোহ
এটুকুই বাঁচার ফসল….
চার
একবারই এই জীবন
মৃত্যু ঠিক একদিনের অন্ধকার
একলা মন পাল্টে দেয় সব মানে
গভীরতম এই অসুখ
কার মুখোশ জলছবি
স্বপ্নহীন মিছিল মুখ
কোন নায়ক কোন কবি
অতিমারীর এই সময়
তবুও বাঁচা সব প্রাণে
আকাশ মেঘ নীল সাদায়
আষাঢ় দিন হোক গানের
একটা দিনের আত্মকথন…
“তাগরা রোহো”...
সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় Sudipta Chattopadhyay
মনের নিভৃত আঙিনায়
নিরন্তর এক রিনরিন!
নিকোনো বুকের উঠোন
নরম আঁচড়ে দাগ কাটে
একটা দিনের উচ্চারণ!
এ যেন এক ধূ ধূ কাল,
দ্বিতীয় ঢেউয়ে সার সার জলন্ত চিতার বহ্নিশিখায়
কাঁপছে অদূরের কাফন,
নিকষ আঁধারে গোরের মাটি ,শূন্য কলস,
উড়ন্ত
ছাইয়ে সময় আঁকছে রঙযুদ্ধের
এই বেরং লড়াই এর কাহিনী
আজ প্রমাণিত রক্তের রং আসলে শুধুই লাল …
এক একটি মুছে যাওয়া হঠাৎ নিয়ে জমে উঠছে মৃত্যুকাল
থমকে যাওয়া বিছিন্নকালেও আবহমান ঘুরবে সময়ের চক্র
ধ্বংসের মধ্যেও পদ্মপাতায় জলের মত টলটল করবে
এক একটা ক্ষণজন্মার আখ্যান;
পাল্টে যাওয়া অতিমারীর তিথিতেও
বার বার ফিরে আসবে জন্মের শুভক্ষণ
অজানার দিকে উড়বে নতুন হাওয়ার পাল
ক্ষণিক ছিল যে স্পর্শ তার আকাঙ্খায় প্রতিটি বসন্তে
আবার নরম ঘাসে ঝরবে হলুদ অমলতাস
দুহাতের পাতায় গোলাপী গাল পেতে বসে থাকবে
চেরীর অনন্ত ব্লশমের আশা…
আবার মৃত্যু অবধারিত জেনেও দীপাবলীর আলোকশিখায় পুড়বে শ্যামাপোকার পতঙ্গজন্ম…
দহনের জ্বালা জেনেও দলে দলে পাখী জটিংগা
ভালবাসার মিথ বুকে নিয়ে ছুটবে মৃত্যুর আগুন অভিযানে…
আর হাতের মুঠোর উষ্ণতায় লুকোনো
অনন্ত ভালবাসার শুভকামনায় মৃত্যুর ভীড়েও বারবার ফিরবে
নতুন জন্মের কাল …
ওদিকে গঙ্গা। এদিকে আমি
সুস্মিতা দত্ত Sushmita Dutta
ওদিকে গঙ্গা থেকে সাত সমুদ্রের ধারা
স্তম্ভিত করা মৃতের মিছিল কাতারে, কাতারে,
কাতারে, কাতারে….
আমি শুধু খবর শুনছি,
বেঁচে আছি।
এদিকে নিউ ইয়র্ক শহরে
একা আমি, চলার পথ জুড়ে
হাজারে, হাজারে, মাটি ফুঁড়ে
অতৃপ্ত দীর্ঘ নিশ্বাস…দীর্ঘ নিশ্বাস
দীর্ঘ নিশ্বাস…
শিক্ষিত শহরের উপেক্ষিত গর্ভে
আধমরা জীবন্ত লাশ…
পায়ে শিকল জড়িয়ে বলছে –
যাচ্ছ কোথায়? কোথায় যাচ্ছ ?
বেঁচে আছ কোন অধিকারে ?
লজ্জা। লজ্জা। লজ্জা।
সত্যি, কি দূঃসাহস আমার
নির্লজ্জ হয়ে বেঁচে থাকার ।