কুম্ভ মেলা Kumbh Mela 2025
Add Your Heading Text Here
‘হারাধনের পাঁচটি ছেলে গেল বনের ধার, একটি গেল বাঘের পেটে রইল বাকি চার’...
শ্রাবণী ব্যানার্জী, নিউ জার্সি
কিছুবছর আগেও যখন মার্কিন মুল্লুক থেকে কলকাতার দিকে পাড়ি দিতাম তখন বহু সন্ধ্যাতেই ওখানকার বাড়িতে এক মজলিসি আড্ডা বসত। রাজনীতি, নেতাদের প্রশংসা ও গালাগাল, চলচ্চিত্র, পুরোনো দিনের গান, চোর ডাকাত, রবীন্দ্রনাথ, বার্নার্ডশ, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, ভূত, কুকুর মায় বাঘ পর্যন্ত আড্ডার টপিক থেকে বাদ পড়তো না। যদিও আসর জমানোর প্রতিযোগিতায় অনেকেই ব্রোঞ্জ বা সিলভার মেডেল পাবার যোগ্যতা রাখতেন কিন্তু নি:সন্দেহে গোল্ড মেডেলটি প্রাপ্য ছিল আমার এক তুতো দাদার। তিনি কখনো ছড়া কেটে, কখনো গান গেয়ে আর কখনো বা শুধুই অভিনয়ের দ্বারা (তিনটিতেই সিদ্ধহস্ত)এমন একটি গল্পের পরিবেশ সৃষ্টি করতেন যে দুঁদে উকিলরাও সেই ডাহা বানানো কথাগুলি শুনে বাক্শক্তি হারিয়ে কেমন যেন অসহায় বোধ করতেন। এককথায় এই দাদাটিকে ব্রজদা ও টেনিদার মিলিত সংস্করণ বললে অত্যুক্তি হয় না।

এইরকমই শ্রাবনের এক সন্ধায় হাতে একটি রঙিন পানীয় নিয়ে দাদা তার সুন্দর বনের বাঘ দর্শনের গল্প শুরু করলেন।প্রথমেই হাত দুটিকে কপালে ঠেকিয়ে পরশুরাম বর্ণিত বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায়ের স্তবটি সেরে নিলেন কারণ তার কৃপা দৃষ্টি ছিল বলেই বাঘ নাকি দাদাকে অত্যন্ত স্নেহের চোখে দেখেছিল।
“ নমামি দক্ষিনরায় সোঁদরবনে বাস,
হোগলা উলুর ঝোপে থাকেন বারোমাস।
দক্ষিণেতে কাকদ্বীপ শাহাবাজপুর
উত্তরেতে ভাগীরথী বহে যতদূর
পশ্চিমে ঘাটাল পূবে বাকলা পরগণা
এই সীমানার মাঝে প্রভু দেন হানা”
জ্যোৎস্না রাতে দাদা একা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছেন —- মাঝে মধ্যে জলের ঝুপঝাপ, ডাব পড়ার ধুপধাপ, সাপ চলার খসখস ও ওনার জুতোর মসমস শব্দ ছাড়া আর কিছুই নাকি উনি শুনতে পাচ্ছেন না।এইভাবেই চলতে চলতে হঠাৎ এক অপরূপ দৃশ্য দেখে তিনি থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন।চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে একটি কেঁদো বাঘ গ্যাঁট হয়ে তার সামনে থাবা গেড়ে বসে আছে।আহা!কি হ্যান্ডসাম দেখতে, রূপ যেন একেবারে ফেটে পড়ছে আর তেমনি পাগলা করা চাহনি।মুগ্ধ হয়ে দাদা বাঘের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন আর সেও অপলক দৃষ্টিতে দাদাকে দেখতে লাগলো।পাশ থেকে একজন বেরসিক ফোড়ন কাটলো ‘আপনাদের শুভদৃষ্টি হয়েছিল নাকি দাদা?’ এসব তুচ্ছ মন্তব্য গায়ে মেখে দাদা কোনদিনই তার গল্পের ফ্লো নষ্ট করেন না আর তার সেই অসাধারণ গল্প বলার গুণে ধীরে ধীরে আমাদের সবারই মানসপটে বাঘের সেই মিষ্টি মুখটি ভেসে উঠলো শুধু কাছে গিয়ে থুতনিটা তুলে ধরে একটু চুমু খাওয়ার অপেক্ষা।



পরের দিন সকালেই এক পাড়াতুতো ভাই এসে বললো, (তিনিও সেই সান্ধ্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন ) ‘চলো না দিদি আমরা সবাই মিলে একটু হৈ হৈ করে সুন্দরবন ঘুরে আসি’। সে আর বলতে! দিদি তো সারাক্ষণ নেচেই আছে তাতে আবার হ্যান্ডসাম বাঘের যে বর্ণনা শুনেছে তাতে এখন মাথা ঠিক রাখাই শক্ত।কয়েকদিনের মধ্যেই সুন্দরবন যাওয়ার সব ঠিকঠাক হয়ে গেল কিন্তু দাদা এই ট্রিপে যোগ দিতে পারলেন না বলে সবারই মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।যাত্রার আগে তিনি টেলিফোনেই জ্ঞান দিয়ে বল্লেন — ওখানে গিয়ে চাষা জেলে সবার সাথেই আলাপ করিস তাহলে তাদের জীবনযাত্রা সন্মন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবি। সবসময় মনে রাখিস — যস্মিন দেশে যদাচার, কাছা খুলে নদী পার। প্রথমটি আমি সবসময় মেনে চলি কিন্তু দ্বিতীয়টি আমার জেন্ডারে ফলো করা অসম্ভব বলে কান দিলাম না।
ভোর বেলাতেই একটি বড়সড় জীপ নিয়ে সুন্দরবনের দিকে রওনা হলাম। শহর ছাড়ার পর থেকেই রাস্তার অবস্থা হয়ে উঠলো ভয়াবহ। সব গর্তাগর্ত উপেক্ষা করে ছোকরা ড্রাইভার তীরবেগে জীপটি চালিয়ে দিল। কখনো শূন্যে লাফ মেরে জীপের ছাদে গিয়ে মাথা ঠুকি আর কখনো বা টাল সামলাতে না পেরে অন্যের কোলে গিয়ে বসি।পেছন থেকে একজন বলে উঠলো ‘এক পিস্এ একটু গদখালি পর্যন্ত পৌঁছে দাও ভাই(কারণ তারপর আর রাস্তা নেই নৌকোই ভরসা)সারাজীবন তোমার কেনা গোলাম হয়ে থাকব। আমার পাশে বসা মানুষটি করুন সুরে বলতে লাগলেন তার শরীরের অনেক অর্গানই নাকি ঠেলে বেরিয়ে আসার উপক্রম করছে উনি তাদের কোনমতে সামলে রেখেছেন। আমাদের ড্রাইভার বাবাজি সব কথা অগ্রাহ্য করে নিজেও নাচতে নাচতে আর আমাদেরও নাচাতে নাচাতে গোলার বেগে ছুটে চললেন। ঘণ্টা আড়াই পর যখন গদখালি পৌছোলাম তখন একজনই মাত্র ড্রাইভারের প্রশংসা করে বল্লেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ ওনার কোমরের গোটা দুয়েক হাড় নাকি এদিক ওদিক ম্যুভ করে যাওয়ায় যে অকথ্য কষ্ট পাচ্ছিলেন এখন ঝাঁকানিতে সেগুলি আবার যথাস্থানে বসে যাওয়ায় উনি কিঞ্চিত আরাম বোধ করছেন।গদখালিতে নেমেই কয়েকজন প্রচুর পরিমাণে কর্দমাক্ত পানিফল, শাঁস সমেত ডাব আর তেলেভাজা কিনে নিয়ে এলে আমার ঘরের লোকটি একটিও দাঁতে কাটলেন না আর তা দেখে লোকজন আমাদের আমেরিকান পেট ও ইমিউনিটি নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো।এসব শুনে আমারও রোখ চেপে গেলো তাই অত্যন্ত তেজের সাথে সেই পানিফল আর রাস্তার তেলেভাজা বেশ কয়েকটা খেয়ে দেখিয়ে দিলাম বহুবছর আমেরিকায় থাকলেও ইমিউনিটিতে তাদের থেকে কিছুমাত্র কম যাই না।
গদখালি থেকে নৌকো যাত্রা শুরু হল – ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা হোটেলে গিয়ে পৌছোলাম। এই গ্রামটি জনমানবশূন্য না হলেও গণ্ডগ্রাম বললে অত্যুক্তি হয় না। ইলেকট্রিসিটির কোনও বালাই নেই তাই হোটেলের আলো পাখা সব জেনারেটরেই চলে।নৌকো থেকে নামতে গিয়ে অনেককেই পা হড়কে গেল।ঘাটের গায়েই দেখলাম চাচার একটি ছোট মুদির দোকান আর পাশে গোটা দুয়েক ছাগল আর একটা বাছুর বাঁধা।বেশ কিছুটা গাছপালা ও ডোবা পেরিয়ে অবশেষে আমাদের হোটেলের দর্শন পেলাম, রাতে খাবারের মেনু ছিল -ডাল, চচ্চড়ি, মাছ আর আমড়ার টক ।
বলাবাহুল্য কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আমেরিকান পেট সেই বিশুদ্ধ পাঁক মাখানো পানিফল, রাস্তার তেলেভাজা আর এখানকার আমড়ার টকের ধাক্কা সামলাতে পারল না তাই কোনওমতে ধুঁকতে ধুঁকতে বিছানার পরিবর্তে বাথরুমের মেঝেতেই আশ্রয় নিলাম। চতুর্দিকে তখন আমাকে নিয়ে একেবারে হৈহৈ রৈরৈ কান্ড। এখানে না আছে কোনও রাস্তাঘাট, না কোনও ডাক্তার বা হাসপাতাল মায় হিন্দু সৎকার সমিতিকে খবর দেওয়ার পথও বন্ধ।এমন সময় হোটেলের বাচ্ছা চাকরটা ছুটতে ছুটতে এসে বললো – চাচার দোকানে ইলেক্ট্রিকের গুঁড়ো (ইলেকট্রল)পাওয়া যায় জলে গুলে খেয়ে নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার কর্তামশাই হাতে দুটি ট্যাবলেট ধরিয়ে রাস্তার তেলেভাজা ভক্ষণের জন্য যে পরিমাণ বাক্যিবাণ ছাড়তে লাগলেন তাতে মনে হল এর থেকে বাঘের পেটে যাওয়াও শ্রেয়।
পরেরদিন সকালে লোকজন গরম ফুলকো লুচি, আলুর দম ও হালুয়া দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারল আর আমার হাতে ধরালো কিছুটা জলে ভেজানো চিঁড়ে। এমনসময় একটি সৌম্য দর্শন ছেলে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করে বললো তার নাম পার্থ আর সে নাকি ফ্রি গাইড হিসাবে দুদিন ধরে আমাদের সুন্দরবন ঘুরে দেখাবে।হোটেলের মালিক ফোন করে জানালেন, এই ছেলেটি বড়লোকের সন্তান তাদের কাছে একটি পয়সাও পায় না শুধু জঙ্গল ভালোবাসে বলে কিছুদিন সুন্দরবনে আছে। ছেলেটির নাকি জঙ্গল সন্মন্ধে অসাধারণ জ্ঞান আর শুধু ভারতবর্ষ নয় ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়েও কিছুদিন থেকে এসেছে।
পার্থ আমাদের নিয়ে নৌকোতে সজনেখালির দিকে চলল , সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যাঘ্র ও কুমীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা।জলের ধারে ধারে ম্যানগ্রোভ বা গরান গাছগুলিকে দেখিয়ে বললো সারা পৃথিবীতে নাকি এত ম্যানগ্রোভের জঙ্গল নেই, ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ দুটোতেই সুন্দরবনের ব্যাপ্তি। এখানে হিন্দু মুসলমান সবাই মিলেমিশেই থাকে আর বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায় ছাড়াও কালু খাঁ ও বনবিবির পূজোও লোকজন খুব ভক্তিভরে করে।টুরিস্ট লজের সামনে দেখলাম বেশ কিছু ইউরোপিয়ান বাঁদরদের কলা খাওয়াচ্ছে, যদিও টুরিস্টদের কল্যাণে এখানে বাঁদরদের কোনও খাওয়ার অভাব নেই তবুও দেখলাম কিছু বাঁদর একে অন্যের পিঠ থেকে উকুন বেছে দিচ্ছে আর সেগুলিকে ভেজিটেরিয়ান ডিস ভেবে মুখেও পুরছে।




এ তল্লাটে ছোট বড় সব সাইজের কুমীর দেখতে পেলেও বাঘ দেখার সৌভাগ্য হল না।একটা কুমীর এমন ছলোছলো চোখে শুয়ে আছে যে দেখে বড় মায়া হল। পাশ থেকে ভাই বললো ‘দেখো দিদি আহা বলে যেন আবার রুমাল দিয়ে চোখের জল মোছাতে যেও না তাহলেই ল্যাজের ঝাপটা দিয়ে জলে টেনে নেবে।কুম্ভীরাশ্রু কথাটা মনে আছে তো?’
শুনলাম পশ্চিমবঙ্গের দিকে নাকি দুশো আড়াইশোর বেশি বাঘ থাকে না আর বাংলাদেশকে ধরলে খুব বেশি হলে পাঁচশো। যদিও এদের পাসপোর্ট ভিসা লাগে না তবুও এরা নিজেদের গণ্ডির মধ্যেই বিচরণ করে। এই প্রথম বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায়কে দেখতে পেলাম, মন্দিরে ঢুকে দেখলাম লোকজন কালুখাঁ ও বনবিবিকেও ভক্তি ভরে প্রণাম করছে যাতে সাপ কুমীরেরও দর্শন পেতে না হয় অর্থাৎ ইনসিওরেন্সের ফুল কভারেজই নিয়ে রাখছে।মন্দিরের কাছে এক বিধবার সাথে আলাপ হল যার স্বামী ও একটি সন্তান বেআইনি ভাবে মধু চুরি করতে গিয়ে বাঘের পেটে গেছে।এ তল্লাটে লোকজন অত্যন্ত গরীব তাই পেটের দায়েই মধু চুরি করতে যায়। বাঘ পেছন থেকে অ্যাটাক করে বলে তাদের ধোঁকা দেবার জন্য মাথার পেছনে মানুষের মুখোশ এঁটে বেরোয় যাতে বাঘ তাদেরকে সামনে থেকে দেখছে বলে মনে করে। সামনের লোকটি মুখ না ঘুরিয়ে পেছনের লোকের উদ্দেশ্যে নাকি একটি সংকেত পাঠায়, উত্তর পেলে বোঝে সে তখনও ধরাধামে আছে আর না পাওয়ার অর্থ হল মামাবাবু নি:শব্দে তার কাজ সেরে চলে গেছেন।এই তল্লাটের একটি বিধবাদের গ্রাম আছে যেখানে সবার স্বামীরাই মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের পেটে গেছে।
সুন্দরবনের বাঘেরা নোনা জল খায় বলেই নাকি তারা এত হিংস্র। তাদের মামা বলে ডেকে আমরা যতই শ্রদ্ধা দেখাই না কেন এ মামারা কংস মামারও বাড়া। শিকারের সময় তেনারা ভাগ্নে ভাগ্নীদেরও গরু ছাগলের পর্যাতেই ফেলেন আর জাত ধর্ম নিয়েও বাছবিচার করেন না – ‘ছাগল শুওর গরু হিন্দু মুছলমান, প্রভুর উদরে যাঞ্চা সকালে সমান’।
পার্থ বলল, বাঘ অত্যন্ত ভালো সাঁতারু জন্তুজানোয়ারকে নদী পেরোতে দেখলে জলে গোঁফ ডুবিয়ে স্রোতের গতিটা মেপে নেয় তারপর ঠিক ততটা পিছিয়ে এসে স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাঁৎরাতে থাকে। সপ্তাহখানেক আগে ও নাকি নৌকোতে চেপে যাচ্ছিল হঠাৎ নৌকোটা অসম্ভব টলমল করাতে পেছনে তাকিয়ে দেখে মাঝিটা আর নেই। হ্যান্ডসাম বাঘেদের বর্ণনা শুনে আমার মুখ উত্তরোত্তর ফ্যাকাশে হতে দেখে পার্থ সান্তনা দিয়ে বলল ‘অতো ভয় পাবেন না দিদি মামারা পেছন থেকে এসে এক ঝটকায় থাবা দিয়ে শুধু ঘাড়টা ভেঙ্গে দেয় তাই কষ্ট বোঝার আগেই পরপারে চলে যাবেন।’ এহেন সান্তনা বাক্য শুনে দুর্গা নাম জপতে জপতে লঞ্চের একটু ভেতরে ঢুকে বসলাম।
আমাদের লঞ্চটা যখন পাখিরালয়ের পাস দিয়ে চলতে লাগল তখন নামটা কানে শুনতে বেশ মধুর ঠেকলো কারণ চারিদিকের গ্রামের নামগুলির পেছনে ‘খালি’ শুনতে শুনতে কান একেবারে ধরে গিয়েছিল। এই যেমন ধরুন বক্খালি, গদখালি, সজনেখালি, সন্দেশখালি, সুধন্যখালি ইত্যাদি। লোকজন এখানে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে যাতায়াত করে কারণ রাস্তাঘাটের কোনও বালাই নেই। পার্থ মাঝিকে বিদ্যেধরি নদীর ওপর দিয়ে যেতে বললো আরও কিছুদূর গিয়ে দেখলাম মাতলা নদীও তার সাথে এসে মিশেছে। সাগরের কাছে এসে অনেকগুলি নদী মিলেমিশে পলিমাটি ফেলে বিশ্বের সবথেকে বড় ডেল্টা বা বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।পার্থ বললো – এখানকার মানুষ প্রতিদিন এদের নিয়েই ঘর করে দিদি, তাই কাকে সাপে কাটলো আর কাকেই বাঘ কুমীরে তুলে নিয়ে গেলো সে নিয়ে ভাবতে গেলে কি এদের চলে? ছড়াগুলো শোনেন নি? সদ্য বাঘে তুলে নিয়ে যাওয়া দাদার কথা উল্লেখ করে দেওর বৌদিকে গিয়ে বলছে – ‘রন্ধন থুইয়া এখন ক্রন্দনে দাও মন, দাদারে লইয়া গেল শ্রীবৃন্দাবন’। ননদ ভাজের সম্পর্কের জেরে বৌটি বেশ হেলতে দুলতে গিয়ে সকালে কুমীরে তুলে নিয়ে যাওয়া ননদ সন্মন্ধে বললো – ‘ভালো কথা মনে হইল আঁচাইতে আঁচাইতে, ঠাকুরঝিকে লইয়া গেল নাচাইতে নাচাইতে’। এ যেন অনেকটা – ‘হারাধনের পাঁচটি ছেলে গেল বনের ধার, একটি গেল বাঘের পেটে রইল বাকি চার’।
শুনলাম হরিণ ও অন্যান্য জন্তুর সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে বাঘেদের বড় একটা খাবার জোটে না তাই বহু বাঘ নাকি মূলত অনাহারেই মারা যাচ্ছে।পেটের জ্বালাতেই তারা গ্রামের মধ্যে ঢুকে গরু ছাগল তুলে নিয়ে যায় তাই জাল দিয়ে আড়াল করেও বিশেষ লাভ হয় নি। সেটা শোনার পর থেকেই সেই খেতে না পাওয়া বাঘগুলোর ওপর আমার ভাইয়ের দরদ একেবারে উথলে উঠলো, যখনই কোথাও হরিণ চরতে দ্যাখে তখনই আহা বাঘ তাদের মিস্ করে গেল বলে হাহুতাশ করে। শুধু তাই নয় পার্থ যখন বলল – এখন ভাঁটার সময় তাই বাঘ নদীতে মাছ খেতে আসতে পারে তখন সে পার্থর কাছে গিয়ে ঝুলোঝুলি করতে লাগলো একটু বাঘ দেখিয়ে দেবার জন্য ; ভাবখানা এমন যেন পার্থ বাঘ পকেটে নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় দূর থেকে তিনটে চিতল হরিণ দেখতে পেয়ে আমার পাতানো ভাইটি একেবারে হায় হায় করে উঠল সম্ভব হলে সে নাকি তক্ষুনি এসএমএস পাঠিয়ে মামাদের হরিণগুলোর লোকেশন জানিয়ে দিত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পার্থ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারায় সবাইকে চুপ করতে বলল কারণ নদীর ধরে সে বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ দেখতে পেয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই যেন চোখের পলকে ঘটনাটা ঘটে গেল, হরিণগুলো প্রাণভয়ে এক চূড়ান্ত লাফ দিল আর তাদেরকে একটি ডোরাকাটা বিদ্যুৎবেগে ধাওয়া করল। মুখচোখ ভালো করে দেখতে না পেলেও সেটা যে বাঘ সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই ছিল না তাই আমি আর ভাই বাঘ বাঘ বলে সাংঘাতিক চিৎকার করে উঠলাম। দুঃখের বিষয়, আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ সেই দ্রুত গতিতে চলে যাওয়া বাঘটির দর্শন পায়নি, তাই অন্যরা সোচ্চারে আমাদের বয়েসের দরুণ কার চোখে ঠিক কতটা চালশে পড়েছে সেই গবেষনাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, শুধু আমার কর্তা মশাই গম্ভীর মুখে বল্লেন — পরশুরাতে সেই চাচার দোকানের ভেজাল ‘ইলেক্ট্রিকের’ জল খাওয়ার পর থেকেই আমি নাকি লাগাতার চোখে সরষে ফুল দেখে যাচ্ছি আর খুব সম্ভবত সেটিকেই ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বলে ভ্রম করেছি।
সব টিটকিরি অগ্রাহ্য করে ভাই আবেগের বশে সামনে হাত বাড়িয়ে প্রবল হেঁড়ে গলায় কিশোর কুমারের সেই বিখ্যাত গানটি গেয়ে উঠলো – ‘এক পলকে একটু দেখা আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কি?’ ক্ষতি যথেষ্টই হতো যদি মামাবাবু সামনে হাজির থাকতেন, ভাগ্নের এই বিকট বেসুরো গানে ক্ষেপে গিয়ে হয়তো তাকেই রাতের ডিনার হিসাবে ব্যবহার করতেন।সে রাতে হোটেলে প্রায় সবাই রঙ্গিন পানীয় সহযোগে গরম গরম মাছ ভাজা ভক্ষন করলেন আর আমার ট্র্যাক রেকর্ডের জন্য হাতে ধরানো হল কিছুটা আলু সেদ্ধ ভাত। খানা পিনা দুটো থেকেই বঞ্চিত হয়ে রাতের অন্ধকারে একসময় বাইরে এসে দাঁড়ালাম আর চোখে পড়ল এক অপূর্ব দৃশ্য। শহরাঞ্চলে চতুর্দিকের আলোতে এই তারায় ভরা অন্ধকার আকাশ দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয় না, মনে হল অজস্র ছোট ছোট নীল আলো দিয়ে সাজানো এক চাঁদোয়ার তলায় আমি দাঁড়িয়ে আছি।
পরের দিন আমাদের ফিরে আসার পালা।পার্থকে বিদায় জানাতে গিয়ে শুনলাম চাচার দোকানের পাশে বসে থাকা সেই বাছুরটিকে কাল রাতেই বাঘে তুলে নিয়ে গেছে, সেটা শোনা অবধি বুকের ভেতরটা কেমন যেন করতে লাগল। কাল সকালেও বাছুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে নৌকোয় উঠেছিলাম আর আজ কিনা সে নেই? ফেরার পথে সেই শূন্য খুঁটিটার দিকে তাকিয়ে বার বার বাছুরটার মুখ মনে পড়তে লাগলো তবুও কেন জানি না সেই ঘাতক বাঘটার ওপর রাগ করতে পারলাম না। খাদ্য -খাদক সম্পর্ক তো পৃথিবীতে চিরদিনের, তবু তো প্রাণীরা পেটের তাগিদে হত্যা করে আর আমরা তথাকথিত সভ্য মানুষরা তো অকারনেই হিংস্রতা দেখাই । এ প্রসঙ্গে বার্নার্ড শর সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে গেল – when a man wants to murder a tiger he calls it sport; when a tiger wants to murder him he calls it ferocity’। মনে পড়ে গেল আমার বাবা বলতেন — মনে রাখিস পৃথিবীটা শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়। সুন্দরবনকে বিদায় জানানোর আগে অতি প্রনম্য বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায় ছাড়াও কালু খাঁ, বনবিবি, গাজী সাহেব সবাইকেই মনে মনে পেন্নাম ঠুকে বলে এলাম এই ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’ প্রাণীগুলো তোমাদের জিম্মাতেই রইল প্রভু, দেখো এরা যেন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত না হয়ে যায়।



Sundarbans (Bengali: সুন্দরবন, Sundôrbôn) meaning “beautiful forest” is a vast land owned about 40 percent by India and 60 percent by Bangladesh. Sundarbans (a collection of many “bans” forests) come under UNESCO World Heritage Sites. Located in the delta of the Indian and Bangladesh rivers – Padma, Brahmaputra, and Meghna flowing into the Bay of Bengal. It is one of the largestmangroves have shrubs that grow in coastal saline water making it an ideal home for wildlife animals and the most feared ones are huge crocodiles in the waters all around the jungles and royal Bengal tigers in the evergreen forests.
Humans co-existing with Royal Bengal Tigers
“জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘের ডর, এরই মধ্যে বাঁধি ঘর"






With a population of over 4 million, The history of human settlement in the Sundarbans area can be traced back to the Mauryan era (4th-2nd century BCE) with the discovery of a ruin of an abandoned city found in the Baghmara Forest Block. Most villagers in the Sundarbans are quoted saying in Bengali – “জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘের ডর, এরই মধ্যে বাঁধি ঘর” meaning, we live here fearing crocodiles in the water and tigers on land. The worship of Ban Devi (Goddess of the Forest) is a common ritual seeking protection from wild animals.
The Industry: What do they do for survival?
The Sundarbans provide sustainable livelihoods for millions of people. The major industry in Sundarbans is “Fisheries”. Exports of fresh fish, dried fish, lobsters, prawns, and crabs and also locally grown honey are the main source of income. Fresh fruits luke mangoes of different varieties and bananas also go for outside markets in West Bengal and Bangladesh.
Tourism-related services also provide good income.






Humans Living with Tigers: Video
Govt. owned Travel and Tourism Information

DEPARTMENT OF TOURISM
GOVERNMENT OF WEST BENGAL
Matla Tourism Property
Also known as Sajnekhali Tourist Lodge
Sunderbans, Post Offic: Pakhiralaya, Police Station: Sunderban Coastal,
PIN : 743370
Contact No.: 9732509925
Email: [email protected]
Privately owned Travel and Tourism Information

Contacts:
Village: Dulki, Post: Dulki Dist: South 24 pgs, Dulki purbo para road Pin-743370, West Bengal
+91-8582818403 /
+91-8538826984
sundarbanbengaltourism
@gmail.com
Explore Travel to Sundarbans From Kolkata
Book this company for your Sundarban tour. Book a Sundarban Tour Package and this company will pick you up from Kolkata. The Packages included here are priced in Rupees/per person.

Package Trip details:
One Day Tour: 6 AM to 9 PM, Pick up & Drop to Kolkata. Boat Safari, Launch, Sightseeing.
Tour price per person Rs – 2799 (No hidden cost)
One Night/Two Days Tour: 2 days in Mangrove, Night stay at resort, Pick up & Drop to Kolkata,
Tour cost per person Rs. 3999 (No hidden cost)
Two nights/Three Days Tour: 2 days in Boat Safari, 1 day Jungle Safari, Pick up & Drop to Kolkata. Tour price Rs. 5499 per person (No hidden cost)
Three Days Special: 2 days Boat and 2 Jungle Safari, Pick up & Drop to Kolkata, Explore Sudhyanyakhali Tiger reserve, Tour cost Rs. 6999 / Person

