Welcome



Corporate Sponsors

TriState Bulletin is thankful to Unicef and Nike for supporting Women's Empowerment. Voicing Unicef, actress Priyanka Chopra says, "I made myself irreplaceable." Nike encourages women ro do what they love to do, with Nike's corporate slogan,"Just do it."

In March, the month for Women Recognition
was Holi, 2024


This inredibly high resolution painting of Shree Krishna in his childhood is created by VishRaj Creation presenting the joy and colors of Holi.

Holi, dating back to the 4th century, is famous for the playful tossing of colored powders and water reflecting Spring. In Mathura and Vrindavan, thousands of Krishna devotees gather to play Holi reflecting eternal love of Radha and Shree Krishna.

Community Women Recognition

Keeping the community delighted, smiling and eating good food is what Mukta Majumdar believes in. TriState Bulletin recognizes Mukta Majumdar as a truly Community person, sharing nothing but Joy.

Sharing her Holi pictures, she told TriState Bulletin, "It was a very successful Holi this year, It Was a Super Duper hit this time with drinks like real bhaang, thandai and home made mouth-watering Holi Mithaas like Khaja, Gujiya, Malpoa, Mishti doi, Pitha, Phuchka, Jhallmoori, Alukabli and sumptuous food for main course."

Mukta said, "Seeing the success I have declared it as an annual event."

Holi 2024 : The Fun Pictures

History says, for more than 2000 years, Hindus celebrate Holi with bhang. It is a plant-based (cannabis) drink that causes intoxication and creates a sense of good feeling. Women in Edison, New Jersey included bhang in their Holi Special drinks and made it a "Super-Duper" hit celebration. .

Community Women Recognition
Creative Writing


Recognizing Moumon Mitra
A fascinating Writer of TriState Community
Fifteen Publications. Top Sales in Boi Mela, Kolkata.

Born in the IIT, Karagpur campus, where her father was a Civil Engineer. Moumon became a HR professional after graduation at ITC, Kolkata and then got married to Projit Mitra, an IT professional and migrated to US. Her writings began with deep realization of  restrictions imposed on women. Her first writing was on an Indian woman who fell in love with an American and the consequences. However, Moumon’s publications began with a series of poems which got publisher’s attention in Kolkata and on demand for novels, she proved herself to be a committed writer on human issues. 

All her books are available at Deys Publication, Ektara Prakashani, Boiwala Book Cafe, Kolikata Letterpress, Darabar Jayga. Also, available online in India as well as in College Street.

Moumon was recently honored at Saraswati Puja celebration organized by Sreeshti, NJ. Seen in the picture are Ranjita Chakrabarty and Anindita Chattopadhyay. Speaking on stage, Moumon talked about her publications and said, very emphatically, that she writes in Bengali and it is her dream to make every second generation in this country learn to speak, read and write Bengali.

Moumon Mitra can be reached on Facebook and also via TriState Bulletin Contact. 

All Moumon Mitra's books are available at Deys Publication, Ektara Prakashani, Boiwala Book Cafe, Kolikata Letterpress, and Darabar Jayga. Also, available online in India as well as in College Street. Contact Moumon Mitra at Facebook Link: facebook.com/moumonn.mitra


Recognizing Srabani Banerjee
Based in New Jersey, Srabani Banerjee writes consistently on Travelouges capturing voices of people, history, mythology and pictures taken by her at her global visits.

Srabani Banerjee's in-depth writing on Sundarbans is highly acclaimed by readers worldwide. Her writings published in TriState Bulletin include incredible captures of Argentina, Sicili and up-coming Travelogue on people, faces, history and philosophy of Greece, releasing in the next issue of TriState Bulletin.

Besides TriState Bulletin, Srabani Banerjee has huge fan followers at "Amader Chuti" - a Kolkata-based Online Travel magazine. Her published writings are in top publications like, Bartaman Magazine Prakriti, Ananda Bazar, Desh and also in New Jersey-based publication, Anandalipi.

On reader's request, we are publishing, once again, Srabani Banerjee's hillarious writing on Kolkata:
ফেলে আসা দিনগুলি  :
Pictorial input and Visualization: Sushmita Dutta

আমার এক দিদির কাছ থেকে সেদিন অনুরোধ এল আমি যেন আমাদের ছেলেবেলা সম্মন্ধে কিছু একটা লিখি। হইহই করে বলে উঠলাম ‘ও বাবা তাহলে তো স্মৃতির পর্দাখানা অনেকখানি সরিয়ে ফেলতে হবে গো’ তবুও একসময় অনুরোধ এড়াতে না পেরে কলম হাতে বসে পড়লাম। এখানে জনান্তিকে জানিয়ে রাখি আমি একটি আধা মফ:স্বলী জায়গায় বড় হয়েছিলাম। আজ সেই শহরতলিটি কলকাতা করপোরেশনের আওতায় পড়লেও আমার জেঠামশাই ধর্মতলায় গেলে বাড়িতে বলে যেতেন উনি কলকাতা যাচ্ছেন। সেযুগে ভালোমন্দ মিশিয়ে পাড়া বলে একটি দারুন শব্দ ছিল, সেখানে নিজের পাড়া তো বটেই মায় আশেপাশের পাড়ার লোকজনকেও সবাই চিনতো কারণ তারা বংশ পরম্পরায় একই বাড়িতে বাস করতেন। এখনকার মত অজানা বাইরের লোক বা ফ্ল্যাট বাড়ির ভিড় ছিল না। কে নিজের কাকা পিসি আর কেইবা পাড়ার সে বিশ্লেষণেও আমরা যেতাম না। তখনকার সাবেক কালের বাড়িতে দালান, বৈঠকখানা, ভেতরবাড়ি, ও তার উঠোনে তুলসিমঞ্চ মায় অনেক বাড়িতে গোয়াল ঘরও থাকত। আজকের মত লোকজনের আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু হঠাৎ করে দুপুরে কেউ এসে পড়লে তারা অত্যন্ত খুশি হয়েই নিজেদের ভাতের থালাটা এগিয়ে দিতেন। কোনও দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও যদি কয়েকদিন থেকে চলে যেত আমরা ছোটরা চোখের জল মুছতে মুছতে জুতো লুকিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতাম যদি তার যাওয়াটাকে কোনোমতে ঠেকানো যায়। পাড়ার বড়দের পূর্ণ অধিকার ছিল আমাদের শাসন করার কারণ সেযুগে সবাই বিশ্বাস করতেন ‘It takes a village to raise a child’.

আমাদের ছোটবেলায় টেকনোলজির অবস্থা এতটাই করুন ছিল যে কোনও বাড়িতে একটি আধমনি ওজনের কালো ডায়াল ঘোরানো ফোন থাকলেই তারা বেশ গর্ব বোধ করত। আজ যেমন ফোনে গল্প করতে হলে আলাস্কা থেকে আন্দামান কয়েকবার আঙ্গুল ছোঁয়ানোর মামলা আর তখন বেহালা থেকে বেলেঘাটা কানেক্ট করতে হলে ডায়াল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জনসাধারণ আঙ্গুলের চামড়া খসিয়ে ফেলতেন। তারপর যদিও বা অতি কষ্টে কেষ্টকে পেয়ে আপনি গগন কাঁপিয়ে পল্লীর নিদ্রা দূর করে ‘হ্যালো’ বল্লেন তখন দেখলেন ভালো করে কথা শেষ হবার আগেই মধ্যিখানে আর একজন ঢুকে পড়ে হুংকার ছাড়ছেন ‘বলি এবার ফোনটা একটু ছাড়বেন?আমারটা যে আরও আর্জেন্ট’ অর্থাৎ ক্রস্ কানেকশন্। তখন টেলিগ্রাম বা ট্রাঙ্কল আসাও ছিল এক সাংঘাতিক ব্যাপার কারণ সেটা এতটাই ব্যয়সাপেক্ষ ছিল যে লোকে ধরেই নিত তা কোন দূ:সংবাদ বহন করে আনছে। একবার পাড়ার একটি মেয়ে বাপের বাড়িতে এসে তার ছেলে দিল্লিতে থাকা বাবাকে কতটা মিস্ করছে জানাতে গিয়ে পয়সা বাঁচিয়ে ‘রাজ মিসিং ইউ’এর বদলে শুধু ‘রাজ মিসিং’ লিখে টেলিগ্রাম করে এলো, তার স্বামী পাগলের মত মাঝরাতে প্লেন ধরে এসে ছেলেকে ইন্টাক্ট দেখে যখন বউকে তেড়ে মারতে যায় তখন সেই সহৃদয় পাড়ার লোকেরাই মেয়েটিকে বাঁচায়।

ভাসা ভাসা মনে পড়ে আমরা যখন খুব ছোট, তখন দাদু একটি আধা আলমারি গোছের রেকর্ড প্লেয়ারএ মাঝে মাঝে মিস হরিমতির ‘শুখনো পাতার নূপুর পায়ে’ বাজাতেন, যদিও সেটি খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। একটি বড় সাইজের হ্যান্ডেল বেশ কয়েকবার পাকিয়ে পিনটিকে রেকর্ডের ওপরে ছেড়ে দিলে তবেই মিস হরিমতি নাকী গলায় গেয়ে উঠতেন আর চোঙ্গয়ের কাছে কান দিয়ে আমরা আনন্দে হাততালি দিতাম। তারপর বাড়িতে এলো ফিয়েস্তা রেকর্ড প্লেয়ার। তখন রেকর্ডে একপিঠে একটা গানই বাজতো তাও আবার ছোটদের হাত দেবার অধিকার ছিল না পাছে ভেঙ্গে ফেলি। ঝামেলা হল যখন পাশের বাড়ির কাকু বোনাসএর টাকা পেয়ে একটি রেকর্ড প্লেয়ার ও একটি মাত্র রেকর্ড কিনে দিনেরাতে বেগম আখতারের ‘কোথা গেলো শ্যাম’ সারা পাড়া কাঁপিয়ে বাজাতে শুরু করলেন। অবশেষে এক পাড়াতুতো কাকা তিতিবিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বল্লেন ‘বলি ও দাদা শ্যাম কোথায় গেলো একটু বলেই দিন না আর যে পারা যাচ্ছে না’।

যদিও তার অনেক আগে থেকেই সবার বাড়িতে রেডিও ছিল কিন্তু অনেকক্ষেত্রে তাদের অবস্থাও খুব সুবিধের ছিল না। আমাদের বাড়ির রেডিও ঘড়ঘড় করলে সবাই মাথায় চাঁটি মেরে তাকে সিধে রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করত আর তিনি প্রায়শই রাস্তা ভুলে পুনরায় ঘড়ঘড় করতে থাকতেন। আমরা অবশ্য এই ধরনের রেডিওতেই শুনতাম সঙ্গীত শিক্ষার আসর, গল্প দাদুর আসর, বোরোলীনের সংসার, অনুরোধের আসর ইত্যাদি। খবর বলার জন্য ছিলেন ইভা নাগ, নীলিমা সান্যাল ও দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যয়রা যাদের চেহারা কোনদিন না দেখলেও তারা হয়ে গিয়েছিলেন আমাদের নিতান্তই কাছের মানুষ। ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান খেলার দিন তো কোনও কথাই নেই। রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে রেডিওর সামনে জটলা করে জনসাধারণ শুনে চলেছেন -- এগিয়ে চলেছেন এগিয়ে চলেছেন তারপরেই সমস্বরে ‘গোল’ বলে এক পিলে চমকানো চিৎকার। একবার দেখি পাড়ার দুটো কুকুর লালু আর কালু তারাও মুখটিকে উর্দ্ধপানে তুলে একযোগে গলা মিলিয়ে ‘গোল’ বলার চেষ্টা করছে, উপহার স্বরূপ তাদেরকেও একটা করে নেড়ে বিসকুট দেওয়া হল। আমাদের জানাশোনা এক মোহনবাগানের সাপোর্টার মাঠে গিয়ে ভুল করে ইস্টবেঙ্গল ফ্যানেদের দলে বসেছিল একটু উসখুস করতেই একজন ‘কোথা থেকে ছারপোকার গন্ধ আসছে রে?’ বলে তেড়ে উঠতেই তার সব উদ্দীপনা বন্ধ হয়ে যায়। শুনেছিলাম একজনরা তাদের তিনটি রেডিওর তিনটি নামকরণ করেছিলেন---- প্রথমটি ‘আমি কান পেতে রই’ অর্থাৎ তার ওপর ডিরেক্টলি কান না পাতলে কিছুই শোনা যেত না, দ্বিতীয়টি ‘তুমি রবে নীরবে’ অর্থাৎ তিনি হঠাৎ করেই বোবা হয়ে যেতেন আবার আচমকাই নিজের বাক্শক্তি ফিরে পেতেন, আর তৃতীয়টি ‘বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি’ কারণ তিনি হেড অফিসের বড়বাবুর মত দিব্যি খোশ মেজাজেই থাকতেন কিন্তু মাঝে মধ্যে ক্ষেপে গিয়ে সারা পাড়া কাঁপিয়ে নিজের অস্তিত্ত জানিয়ে দিতেন।

আমাদের শহরতলিতে সেসময় যৌথ পরিবারের অভাব ছিল না। আমার বাবা পরে আলাদা বাড়ি করে চলে এলেও সেটি পুরোনো বসতবাড়ির এতটাই কাছে ছিল যে যাতায়াতটা কোন ব্যাপারই ছিল না। একবার আমাদের পাড়ায় এক অবাঙ্গালী ক্রিকেটর একটি নার্সারি স্কুল খুলে বসলেন। কিছুদিন পরেই তিনি বাবাকে বল্লেন ‘আপনাদের তল্লাটে লোকজনের বড্ড বেশি ছেলেপুলে হয় যাকেই জিজ্ঞাসা করি বলে ভাইবোনের সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি’। অগত্যা বাবা তাকে বোঝালেন গণনাতে তুতো ভাইবোনরাও সব ঢুকে পড়েছে কারণ বাড়িতে বাচ্চারা অনেকেই নিজের মা, জেঠিমা ও কাকীমা দের যথাক্রমে বড়মা, মেজমা সেজমা, ছোটমা ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে আর তাদের ঠাকুমা সম্প্রদায় পঞ্চাশোর্দ্ধ ছেলেদেরকেও বড় খোকা, মেজ খোকা, সেজ খোকা বলে ডাকেন, তাই এই বিপর্যয়। আজ ভাবতে অবাক লাগে সেযুগে যৌথ পরিবারে লোকসংখ্যা যাই হোক না কেন বেশীরভাগ বাড়িতেই বাথরুমের সংখ্যা ছিল একটি। আমার মার যখন বিয়ে হয় তখন বাচ্ছা বুড়ো ও কাজের লোক নিয়ে বাড়ির জনসংখা ছিল তিরিশোর্দ্ধ, কিন্তু বাথরুম ছিল একটি। তাই সেযুগে এই ব্যাপারে টাইম ম্যানেজমেন্ট নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। একজন বুঝিয়েছিলো তাদের বাড়ির বাথরুমের ডালডার টিনে নাকি টাইমার ফিট করা থাকে অর্থাৎ মরচে ধরে টিনের তলায় অজস্র ফুটো, তাই জল ভর্তি করে দৌড়লেও বাথরুমে থাকার ডিউরেশন নাকি মিনিট খানেকের বেশি স্থায়ী হয় না।

সে যুগে বাচ্ছা বুড়ো কারুরই জামাকাপড়ের বিশেষ ঘটা ছিল না। যৌথ পরিবারে যেখানে অনেকগুলি ভাইবোন পরপর সাজানো থাকত তাদের অবস্থা ছিল আরও সঙ্গীন। একদা নতুন অবস্থায় যে জামাটি বাড়িতে প্রবেশ করত সেটি ধাপে ধাপে গা বদল হয়ে প্রায় বিবর্ণ অবস্থায় শেষেরটির গায়ে উঠত। গরমকালে খুব ছোটো ছেলেগুলোকে কোমরে একটি ঘুনসি লাগিয়ে উলঙ্গ করেই ছেড়ে দেওয়া হতো, একবার এক পাড়াতুতো ভাই কোমরের ওটাকে পয়সা মনে করে তার বিনিময়ে আমার কাছে লজেন্স চেয়েছিলো। ঠাকুমা সম্প্রদায় বাড়িতে কাজল পেতে কাজললতা থেকে সবার চোখে আচ্ছা করে কাজল লাগিয়ে দিতেন তাতে নাকি চোখ ভালো থাকে। খুব ছোট ছেলেগুলোর কপালে ও সাইডেও লাগানো হতো প্রমাণ সাইজের একটি কাজলের টিপ যাতে নজর না লাগে। দশের নীচে বহু ছেলে মেয়েদেরকেই ভবিষ্যতে ভালো চুল গজাবে আশ্বাস দিয়ে গরমকালে মাথা মুড়িয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো আর ঘামাচি এড়ানোর জন্য ভূতের মতো গায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হতো নাইসিল পাউডার। কিশোরী মেয়েদের মাথায় শালিমার মার্কা নারকেল তেল জবজবে করে লাগিয়ে মা জেঠিমার দল বিকেলে চুলটিকে আচ্ছা করে পেছন দিকে টেনে বেঁধে দিতেন আর কারুর বা মাথায় শোভা পেত বেরাবিনুনি। শীতকালে লাগানো হতো মুখে বোরোলীন আর হাতেপায়ে গ্লিসারিন। তখন অবিবাহিতা মেয়েদের সাজগোজকে অনেকেই ভালো চোখে দেখতেন না, লিপ্স্টিক তো দূরের থাক অনেক বাড়িতে ফেস পাউডারও থাকতো না তারা বডি পাউডার দিয়েই কাজ সারতেন। আধুনিক যুগে যেমন মেকআপ আর বিউটি পার্লারএর জোরে কুরূপারাও সুরূপা হয়ে বেরিয়ে আসেন তখন ছিল ঠিক তার উল্টো। সুরূপারাও যখন মাথায় তেল দিয়ে টাইট করে চুল বেঁধে বিনা মেকআপ্এ অত্যন্ত সাদাসিধে পোশাকে দেখা দিতেন, তখন তাদেরও গ্লামারাস কিছু দেখতে লাগতো না। আশ্চর্যের ব্যাপার সবার কাছে এসব এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে আমরা নিজেদেরকে কেউ অভাগা বলে মনে করি নি। গরম কালে বাচ্ছা মেয়েদের গায়ে থাকত সাদা টেপ ফ্রক তাতে অনেকসময় মা কাকীমারা বুকে পালতোলা নৌকো, হাতী ইত্যাদি এমব্রডারি করে দিতেন আর বাচ্ছা ছেলেগুলো হাফপ্যান্ট পরে খালি গায়েই ঘাটে মাঠে কাদাতে ফুটবল খেলে বেড়াতো বা চাকা চালাতো। এছাড়া ডাংগুলি, লাট্টু, ঘুড়ি বা ইঁট দিয়ে উইকেট বানিয়ে ক্রিকেট খেলা তো ছিলই, আমি অবশ্য মেয়ে হয়েও সেই দলেই পড়তাম। একটু বড় মেয়েরা কাবাডি, খোখো, এক্কাদোক্কা, কিৎকিৎ এসব খেলা নিয়েই থাকত আর খুব ছোটোরা বিরক্ত করলে তাদের দুধেভাতে করে ‘তুই ব্যাটা ডিব্বা চোর’ ইত্যাদি বলে ক্ষেপিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। বাড়ি গিয়ে নালিশ করলে বালিশ পাবি বা পরে দেখবি তোর কি হাল হয় সেগুলোও বলে দিতে ভুলতাম না। যদিও সে যুগে মায়েরা ছেলেমেয়ের হয়ে কথা বলতে যেতেন না নিজেদেরকেই মিটিয়ে নিতে বলতেন। আমাদের কারুরই বিশেষ খেলনা ছিল না যদিও খেলার লোক ঢের ছিল।

একবার ঠাকুমার বাড়ির পাশে ইলুর মেম পুতুলের হেঁটে বেড়ানো দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম কারন তখন বেশিরভাগ মেয়েদের ন্যাকড়ার বা মেলা থেকে আনা প্লাস্টিক ও কাঁচের পুতুলই সম্বল ছিল। বাটার জুতোর বাক্সগুলি তাদের বাসস্থান হিসাবে ব্যাবহার হত, তাই বহুদিন পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল বাটা বোধহয় টাটারই মতো কোনো ভারতীয় নাগরিক। ছোট মেয়েরা ইকিরমিকির, আগডুমবাগডুম আর নয়তো বা ছোট ছোট হাতা খুন্তি নিয়ে রান্নাবাটি খেলতো আর মাঝেমধ্যেই পুতুলের বিয়ে দিত। আমার এক দিদির ন্যাকড়ার ছেলের সাথে ইলুর মেম মেয়ের বিয়ে হল, যদিও সেটা একেবারেই সঠিক ম্যাচ নয়, তবুও দুই বেয়ানের এই বিয়েতে সম্মতি ছিল। ঝামেলা বাঁধলো যখন বিয়ের পর আমার দিদি তার মেম ছেলের বউকে বগলদাবা করে তার নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো আর সাফ জানিয়ে দিলো বিয়ের পর মেয়েদের স্থান শ্বশুর বাড়িতেই বাপের বাড়িতে নয়। বলাবাহুল্য ইলু তার মেয়ের বিয়ের এই ভয়াবহ পরিণতি আশা করে নি তাই তৎক্ষণাৎ সে দিদির চুলের মুঠি ধরে পিঠে ঘা কতক বসিয়ে তার মেম মেয়েকে উদ্ধার করে ঘরে চলে গেল। একই দিনে বিয়ে ও ডিভোর্স দুটি সারা হলেও আমরা ছোটরা সেদিন কেউ জলযোগ থেকে বঞ্চিত হইনি। ছোটবেলায় ইংরাজী সিনেমা চার্লি চ্যাপলিন ও হাটারী দেখলেও আমাদের মনে সব থেকে ছাপ ফেলেছিল গ্লোবে দেখা ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’। যদিও তখন আমার বয়েস বছর পাঁচেকের বেশি ছিল না তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়েও আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম না কিন্তু সিনেমার গানগুলো সবার মুখে মুখে ফিরত। সেবছর পূজোতে সাউন্ড অফ মিউজিকের জামা পড়ে সারেগামাপাধানি ভুলে ছোটরা সবাই ডোরেমিফাসোলাটি গাইতেই ব্যস্ত ছিলাম। মহালয়ার দিন সেই ভোর চারটেয় উঠে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডী পাঠ শোনার পর থেকেই শুরু হতো আমাদের দিন গোনার পালা। তখন রেডিওতে সনত সিংহের ‘একেক্কে এক দুএক্কে দুই’ গানটা শুনলে আমাদেরও আর লেখাপড়ায় মন বসতো না। পাড়ার ঠাকুর বাড়ির কাছেই তৈরী হতো আর আমরা ছোটরা সেই একটু একটু করে ঠাকুর গড়া দেখতাম আর বাড়িতে বসে গানের কথাগুলির মতনই ভাবতাম – ‘কে জানে এবার বোধহয় সিংহরাজের কেশর দিলো জুড়ে, অসুর বোধহয় বেরিয়ে গেছে মোষের পেটটি ফুঁড়ে’।

সেযুগে বেশীরভাগ বাড়ির খাওয়াদাওয়াই ছিল অত্যন্ত সাধারণ। নমাসে ছমাসে কিছু চপ কাটলেট ছাড়া আর কোনও রেষ্টুরেন্টের মুখ দেখেছি বলে মনে পড়ে না। জোর করে বাচ্ছাদের নিমপাতা, নিমের ঝোল, উচ্ছে করলা এসব বসন্ত এড়ানোর জন্য খাইয়ে দেওয়া হতো, না বলার উপায় ছিল না। বিরিয়ানী নামক যে একটি পদার্থ আছে তাও আমরা জানতাম না বড়জোর এক আধবার পোলাউ। যৌথ পরিবারে ছোট বাচ্ছাদের আলাদা থালাও অনেকক্ষেত্রে জুটতো না, এক একটি ব্যাটেলিয়ান ঠাকুমা জেঠিমাদের ঘিরে বসে যেত আর তেনারা--- কে আগে খায়, কাগা খায় না বগা খায় ইতাদি বলে সেমি সলিড মণ্ডগুলো পেটে চালান করে দিতেন। হাঁসের ডিম বাড়িতে সুতো দিয়ে আধখানা করে কেটে বাচ্ছাদের ডালনা করে দেওয়া হতো কারণ অনেকে বাড়িতে মুরগির ডিম ঢোকাতেন না। রবিবার দুপুরগুলো ছিল পাঁঠার মাংস খাওয়ার দিন। বাড়ির কর্তারা রবিবারের বাজারে ঘুম থেকে দেরীতে উঠতেন তাই রবিবারে সকালের জলখাবার গরম সিঙ্গাড়া আর জিলিপি দিয়ে সারা হতো। তারপর দুপুরে যথানিয়মে সবার পাতে পড়ে যেত দুটুকরো মাংস আর একটি প্রমাণ সাইজের আলু। চেয়ে চিন্তে যে এক আধ পয়সা যা পেতাম তা তোলা থাকত অপথ্য কুপথ্য খাবার জন্য।

বাইরে গেলে রসগোল্লা আর নমাসে ছমাসে একটি ছোটো কোয়ালিটি আইসক্রিম বা ক্যাডবেরি ছাড়া বড়রা আর কিছুই কিনে দিতেন না। ফুটপাথের বরফ আইসক্রিম সম্মন্ধে বলা হত সেগুলি নাকি নর্দমার জল দিয়ে তৈরী আর ফুচকাওয়ালার হাত ও তাদের হাইজিন নিয়ে যা বলতো তা একেবারেই কহতব্য নয়। তবুও আমরা সেই অখাদ্যগুলোই বেশি আনন্দ করে খেতাম। বুনো ছোটো লাল কুলের ওপর কয়লার গুঁড়র মত কালো কারেন্ট ছড়িয়ে কার জীভ কতটা কালো হল তার প্রতিযোগিতা চলত। এছাড়াও হাঁড়ি মাথায় ফেরিওয়ালারা জয়নগরের মোয়া, চিঁড়েরচাক, শোনপাপড়ি, চন্দ্রপুলি ও কুকিবিসকুট নিয়ে আসত। গরমকালের বিকেলে বেলফুলের মালা ও কুলফি বিক্রেতার দলও চলে আসতো আর সাপুড়ের বাজনা শুনে তালে তালে সাপের নাচ দেখে আনন্দে আমরা বাচ্ছারা হাততালি দিতাম। হায়!তখন কি আর জানতাম সাপেরা একেবারেই বদ্ধ কালা। দূর থেকে ডুগডুগির আওয়াজ কানে এলেই বুঝতাম রামদাস আর গোলাপীরা চলে এসেছে। থিম যদিও একটাই, লাল ওড়না গায়ে দিয়ে রাস্তা থেকে তোলা ধুলোর পাউডার গালে ঘষে গোলাপী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে আর বাঁদর রামদাস বউয়ের মান ভাঙ্গাতে পিছুপিছু যাচ্ছে। এটাকে যদিও খুব উচ্চমানের ড্রামা বলা যায় না তবুও বাচ্ছারা প্রতিবার এই একই নাটক দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ত। তখন বাড়ির ছাদে মেয়েরা বড়ি ও বিভিন্ন রকমের আচার রোদে দিতো আর আমরা ছোটরা কখনো চোর আর কখনো বা কাকতাড়ুয়ার রোল নিতাম। চারিদিকে ছিল অজস্র পুকুড় আর ধারে ধারে কত গাছ। নারকেল সুপুরী ছাড়াও আম, আমড়া, জামরুল, পেয়ারা কত যে গাছে উঠে পেড়ে খেতাম তার ইয়ত্তা নেই। আজ অবশ্য তা স্মৃতিতেই স্থান পেয়েছে কারণ সেসব বহুদিনই আগেই উধাও হয়ে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে অজস্র ফ্ল্যাট বাড়ির দল।

তখন পাড়ার সরস্বতী পূজোয় বাচ্ছারাও মেতে উঠতো। পূজোর দিন ভোরবেলা লোকের বাড়ির ফুল চুরি করা ছাড়াও তাদেরকে চাঁদা সংগ্রহের কাজে লাগানো হত। ছোটদের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকেই না বলতে পারতেন না, যদিও আমার স্কুল টিচার মা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। চাঁদা চাইতে এলেই কে কোন ক্লাসে পড়ে জেনে নিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে তাদেরকে বানান জিজ্ঞাসা করতেন আর না পারলে তাদের সরস্বতী সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে থাকার অধিকার নেই বলে খেদিয়ে দিতেন। একবার আমাদের এক আত্মীয়কে দেখতে একটু দূরের পাড়ায় মার সাথে গিয়েছিলাম, একটা বছর চোদ্দর ছেলেকে খাতা হাতে এগিয়ে আসতে দেখেই পেছন থেকে একজন সাবধান করে দিলো ‘ওরে যাসনি রে এক্ষুনি বানান জিজ্ঞাসা করবে’। মার রেপুটেশন্ এত দূরে চলে এসেছে দেখে সেদিন চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেটি বন্ধুদের উপদেশ উপেক্ষা করে যখন এগিয়ে এল, মা ছেলেটি ক্লাস টেনে পড়ে জেনে নিয়ে বল্লেন ‘লেফটনেন্ট বানান বল’। ছেলেটি বার দুয়েক lef lef বলে পেছনে হটে দলবল সমেত পগার পার হয়ে গেল।

সে সময়ে পালাপার্বনে পাড়াঘরে মিষ্টি বিতোরণএর একটা চল ছিল তাতে গজা, নিমকি সবই থাকতো আর তাতে একআধবার দুর্ঘটনাও ঘটত। একবার আমার জেঠু উত্তর কলকাতার একটি দোকান থেকে প্রচুর পরিমাণে সাংঘাতিক গোলাপী রংএর গজা নিয়ে এলেন তাই সেগুলিকেও অন্যান্য মিষ্টির সাথে দোলের দিন পাড়ায় বিতরণ করা হল। কিছুক্ষণএর মধ্যেই বাড়ি বদল হতে হতে গজাটি পাড়ার আর এক কাকিমার হাত ধরে পুনরায় আমাদের বাড়িতেই ফিরে এল। তৎক্ষণাৎ আমার জ্যাড়তুতো দিদি চিল্লিয়ে উঠে বললো ‘ও ঠাকুমা দেখে যাও আমাদের গোলাপী গজাটা আবার ফিরে এসেছে’। বলাবাহুল্য, পাড়ার কাকিমা বাড়িতে প্রচুর কাজ ফেলে রেখে এসেছেন বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াতে রাজি হলেন না। পাড়াতে কেউ গয়ায় পিন্ডি দিতে গেলেও আমরা অত্যন্ত উৎসুক ভাবে অপেক্ষা করতাম কখন তারা এক চাঙ্গারি ক্ষীরের প্যারা নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে।

ফেলে আসা দিনগুলি continued

শহরতলিতে লোকজন তখন পাহাড় বলতে দার্জিলিং আর সমুদ্র বলতে পুরীকেই বুঝতো। বড় বড় কালো ট্রাঙ্ক গোছানো আর হোন্ডল পাকানো দেখেই বাচ্ছারা আনন্দে লাফাতে থাকতো। সেই সবাই মিলে হৈহৈ করে ট্রেনে চেপে যাওয়া আর বড় ডিব্বা থেকে লুচি তরকারি আর রসগোল্লা বার করে খাওয়ার স্মৃতি আজও বড় মধুর। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা রথের মেলা থেকে বাঁশি, হার, চুড়ি, খেলনা কিনে আর প্রচুর পাপড় ভাজা খেয়ে তবেই বাড়ি ঢুকত। হাঁ করে পুতুল নাচ দেখতে দেখতে অবাক হয়ে আমরা ছোটরা ভাবতাম রামচন্দ্রর কত ক্ষমতা যে তার একটা পায়ের ছোঁয়াতেই পাষাণ অহল্যা জেগে ওঠে। চড়কের মেলাতে বাঁশের ওপরে লোকগুলোকে ওভাবে বোঁ বোঁ ঘুরতে দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেত তবুও আনন্দ পেতাম তেমনই গাজনের দিন শিব পার্বতীদের দেখে ছুটে যেতাম। সব যুগেই দুষ্টু ছেলেপুলে ছিলো তবে বেশি বাঁদরামি করলে বা নষ্টচন্দ্রের দিন কুকীর্তি করে হাতেনাতে ধরা পড়লে পাড়ার গার্জেন কাকা দাদারাও কান মলে চড়চাপ্পড় কষিয়ে দিতেন। তারাও সেটাকে অন্যায় প্রাপ্য বলে মনে করতো না কারণ সেযুগে অনেক ছেলেপুলের কাছেই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় -- জল ও স্থল ভাগের ন্যায় পৃথিবীটা আহার ও প্রহারেই বিভক্ত ছিল।

সবার বাড়ি থেকেই শেখানো হতো কখনো চেয়ে চেয়ে খেতে নেই তাহলে লোকে হ্যাংলা বলে। আমার মিষ্টি প্রীতির কথা কোথাও অবিদিত ছিল না তাই কারুর বাড়িতে পিঠে পায়েস হলে আমার জন্য তোলা থাকতো চেয়ে খেতে হতো না। একবার আমার পাঁচ বছরের তুতো ভাইকে নিয়ে বাদাম ভাজা কিনে ফিরছি দেখলাম পাড়ার এক কাকিমা রান্নাঘরে জানলার ধারে বসে লুচি ভাজছেন। ভাই বাইরে থেকেই বলল ‘কাকিমা লুচি ভাজছো? মা বলেছে চেয়ে চেয়ে খেতে নেই’। অগত্যা তিনি আমাকে আলুর তরকারিতে নুন ঠিক হয়েছে কিনা পরখ করতে ভেতরে ডাকলেন আর নেহাৎ লুচির সাথে না খেলে নুনের তারতম্যটা বোঝা যায় না তাই দুজনের পাতেই কয়েকটি লুচি আর নলেন গুড় ঢেলে দিলেন। আমাদের ছোটবেলায় কারুর বাড়িতে একটা গাড়ি থাকলেই তাদেরকে বড়লোক বলে গণ্য করা হতো আর সেই সুবাদে বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে একই গল্পের বই বার দশেক পাল্টিয়ে সদলবলে গিয়ে রাজভোগ খেয়ে আসতাম। আমার এক জ্ঞাতি ভাই তার মাকে সকালে নারকেল কোড়াতে বা প্রচুর দুধ ফোটাতে দেখলে এসে বলে যেত আমি যেন বিকেলে তার বাবা মার একটু খোঁজখবর নিতে যাই। না: আমরা কেউ লোভী ছিলাম না।

তখন পাড়ায় কারুর বিয়ে হলে সবাই সেটাকে নিজেদের বাড়ির অনুষ্ঠান বলেই ধরে নিত আর আশেপাশের বাড়িতেও দিন দুয়েক রান্না হতো না। বিয়েতে কনের নিজের ও তার তুতো ভাইবোনদের বন্ধুরাও নিমন্ত্রিত হত। টোপর মাথায় দিয়ে বর আসছে দেখাটাও ছিল এক দারুন ব্যাপার। আমরা সর্বক্ষণ নতুন জামাইকে ঘিরে বসে থাকতাম কারণ অচিরেই তিনি হয়ে উঠতেন সারা পাড়ারই আদরের জামাই। বিয়ের পর এক জামাই আমাদের তল্লাটের একটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকানে অফিসের সহকর্মীকে নিয়ে কচুরী মিষ্টি খেয়ে দাম চোকাতে গিয়ে শুনল ‘আরে রাম রাম জামাইয়ের কাছ থেকে আবার দাম নেবো কি’? সহকর্মীটি তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল -- তুমি কি সবারই জামাই নাকি হে?। ছোটবেলায় শহরতলীতে ক্যাটারার চোখেও দেখিনি তখন বাড়িতেই রান্না হতো। ভিয়েনের সময় আমরা হাঁ করে মিষ্টি বানানো দেখতাম। দূরের আত্মীয়রা কেউ রাতে ফিরতেন না তাই পরের দিন দুপুরেও খাবার ব্যবস্থা থাকতো। আগের দিনের বাঁচা রস থেকে বোঁদে তৈরী হতো আর আমরা ছোটরা সকালের জলখাবার হিসাবে বোঁদে মুড়ি খেতাম। পাড়ার ছেলেরা সবাই কোমরে গামছা দিয়ে পরিবেশণে নেমে যেতো আর বাচ্ছাদের দেওয়া হতো নুন লেবু দেওয়ার ভার, তবে তারাও গামছা না পেলে কান্নাকাটি জুড়ে দিতো।

কলাপাতা ছিল বিয়ে বাড়ির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শোনা যায় তিন বছর বয়সে আমি একটি ট্রাই সাইকেলের বিনিময়ে আমার দাদুকে বিয়ে করতে রাজি হই কিন্তু বিয়েতে কলাপাতা না থাকায় শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসি। এছাড়াও ছিল কম্পিটিশন করে খাওয়া। তবে অনেকক্ষেত্রেই তারা নিজেদের পাতে দিতে না বলে পাশের জনের পাতে মাছ রাজভোগগুলো ঢেলে দিতে বলতেন। বলাবাহুল্য সেগুলি ওনাদের পাতেও বর্ষিত হতো। কেউ কেউ আবার হাতের পাতা দুটো সামনে মেলে মধ্যে যথেষ্ট জায়গা রেখে দু সাইডে সরাতে সরাতে তাদের খাওয়ার অক্ষমতার কথা জানাতেন, কিন্তু মধ্যিখানের ফাঁকফোকড় দিয়ে পাতে পড়ে গেলে ওনারা অপারগ হয়েই পুরোটা খেতে বাধ্য হতেন। একবার আমিও কম্পিটিশন্ করে গোটা দশেক রাজভোগ খেয়ে এসেছিলাম, বাবা শুনে গম্ভীর মুখে বলেছিলেন ‘মা না খেয়ে মরতে সময় লাগে সত্তর দিন আর খেয়ে মরতে কিন্তু একদিন তাই ভবিষ্যতে কথাটা একটু মনে রেখো’।

সেযুগে সুন্দরীর ডেফিনেশন্ ছিল ‘গোরা সর্বহরা’ আর আমার মত শ্যাম বর্ণের মেয়েরা পড়ত সর্বহারার দলে। তখন পাড়ার বয়স্কা দিদারা অনেকেই নিজেদের বৈতরণী পারের চিন্তায় মন না দিয়ে পাড়ার কালো মেযেগুলোকে কিভাবে পার করবেন সেই চিন্তাতেই বিভোর থাকতেন। একবার এক দিদা আমার সামনেই মাকে বল্লেন ‘বলি অ বৌমা তোমার মেয়ে তো ঠিক গৌর বন্ন নয় গো, তাই কাল থেকে গায়ে কাঁচা হলুদ লাগাতে শুরু করো আর কয়েকটা রবি ঠাকুরের গান শিখিয়ে দাও, বলি পার করতে হবে তো’। শয়নে স্বপনে, সুখেদু;খে, আপদেবিপদে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালিদের পাশে আর কেইবা আছেন। স্নানঘর থেকে বাসর ঘর সবেতেই তার দান অসামান্য। প্রথমদিকে তিনটে গান শিখলেই কিছুটা কাজ চলে যেত, দেখতে আসা হবু পাত্র ও তার বাবা মার জন্য গোটা দুয়েক রবীন্দ্রসংগীত আর বাড়িতে ঠাকুমা শাশুড়ি বিদ্যমান থাকলে তার জন্য একটি ভক্তিমূলক। পাড়ায় একজন দক্ষিণীর টিচার ছিলেন যখন তার বাড়ি থেকে সমবেত কন্ঠে ‘আলো আমার আলো ওগো’ রব উঠত তখন সবাই ধরে নিত এরা একেবারেই বিগিনার আর যারা আমার মত কয়েক ধাপ ওপরে বিচরণ করত তাদের সাথে সঙ্গদ করার জন্য সপ্তাহে একদিন তবলচি নিয়োগ করা হতো। বাড়ির কাছেই বড়লোকের এক সুন্দরী মেয়ে তার তবলচির সাথে পালাতে মা আর রিস্ক না নিয়ে একটি বুড়ো তায় অন্ধ তবলচি যোগাড় করে আনলেন।বলাবাহুল্য পাড়াঘরে তার অত্যন্ত হাই ডিমান্ড ছিল আর সেই কারণে তার মেজাজও ছিল তিরিক্ষি। আমাদের বাড়ির কুকুর ব্রাউনসোনা খুব পান খেতে ভালোবাসতো, একদিন ওনাকে ডিবে থেকে পান বার করতে দেখে লোভ সামলাতে না পেরে টুক করে হাত থেকে তুলে নিলো আর উনি আমাকেই দোষী ঠাউরে যাতা বলতে লাগলেন। তিনি নাকি আমার সব কার্যকলাপেরই খবর রাখেন, যে মেয়ে ব্যাটা ছেলেদের মত গাছে চড়ে আর পাড়ায় ছেলেদের সাথে ডাংগুলি খেলে বেড়ায় তার কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না বলে সেদিনই তিনি কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলেন।

সেসময় পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তীর খুব ঘটা ছিল। পাড়ার বাচ্ছা মেয়েরা তখন দলবেঁধে নাচতো আর তালের সাথে পা মেলানোটাই ছিলো তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। যে কথাগুলি রবীন্দ্রনাথ তার কষ্ট কল্পনাতেও লেখার কথা ভাবতে পারেন নি সেরকম একআধটা কথা ঢুকে গেলেও তাদের নাচ প্র্যাক্টিসে কোনও ব্যাঘাত ঘটতো না। একবার দেখি একটা বাচ্ছা মেয়ে আপনমনে গান গেয়ে নেচে যাচ্ছে -- ‘আয় তবে সহচরী, হাতেহাতে ধরি ধরি, নাচিবি ভি. ভি. গিরি, গাহিবি গান’। সেসময় শীতকালে পাড়ার পাড়ায় দেখা যেত মধ্যান্যভোজন সাঙ্গ হলে বৌদিদিদের দল উল কাঁটা নিয়ে রোদে পিঠ ঠেকিয়ে দিব্যি গল্প করতে করতে সোয়েটার বুনে চলেছেন আর কারুর বা হাতে শোভা পেত সিনেমা জগতের ম্যাগাজিন। তারা পা দুটিকে সামনে মেলে হেসে হেসে তাদের হিরো উত্তম কুমার কি করলো সেই আলোচনাতেই মগ্ন থাকতেন, কাউকে বা আবার দেখা যেত দল ছাড়া হয়ে এক মনে গোগ্রাসে গিলে চলেছেন বিমল মিত্রের ইয়া মোটা বই ‘সাহেব বিবি গোলাম’। সেই আসরে ছোটরা তো দূরের থাক অবিবাহিতা মেয়েদের ঢোকাও নিষিদ্ধ ছিল। অনেকে আবার গর্ব সহকারে তাদের স্বামীদের রাতে বাড়ি না ফেরার কথা ঘোষণা করতেন কারণ সেযুগে কার স্বামী অফিসে কতবার ঘেরাও হয়েছেন তার ওপর স্বামীদের পজিশন ও প্রেস্টীজ নির্ভর করত।

শহরতলিতে তখন অনেকেই স্থানীয় বাংলা স্কুলে পড়তো আর যা ছিল অনেকটাই মুখস্থ ভিত্তিক। তখন আজকের মত মহামান্য গুগল টিচার ছিলেন না যে কম্পিউটার খুলে ভুলটা সংশোধন করে নেওয়া যেত। ইতিহাসের অবস্থা ছিল খুবই করুন, আগাপাছা না জেনে প্রথম পাণিপথের যুদ্ধ থেকে সিপাহী বিদ্রোহ, সবারই সাল তারিখ বাচ্ছারা কন্ঠস্থ করতো। পৃথিবীটা গোল জানা থাকলেও কেউ গ্লোব ঘুরিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করত না তাই দেওয়ালে টাঙ্গানো বিশাল ম্যাপে আমাদের সামনে সেটি সমতল আকারেই ধরা দিত। একদিন দেখি একজন পাশের মেয়েটিকে বলছে ‘প্রশান্ত মহাসাগর তো একটাই জানতাম রে কিন্তু দ্যাখ ম্যাপের বাঁ ডান দুদিকেই দেখাচ্ছে’। আমার স্বামী বাংলা মাধ্যম হলেও খুব নামকরা স্কুল থেকে পাস করেছিলেন, কিন্তু একবার জিজ্ঞাসা করাতে বল্লেন স্কুল থেকে নাকি এমন মুখস্ত করিয়েছিলো যে এতবছর পরেও শেফিল্ড ছুরি কাঁচির জন্য বিখ্যাত বা ওসাকা জাহাজ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত তিনি ভোলেন নি। ওনাদের হোস্টেলে নাকি একজন কম্বল মুড়ি দিয়ে আলাদা আলাদা করে মুঘল সম্রাটদের তালিকা মুখস্থ করতে গিয়ে সিকোয়েন্স ভুলে পরীক্ষায় আকবরের পুত্র বাবর লিখে এসেছিল। আমাদের পাড়ায় একজন ‘জার্নি বাই বোট’ ইংরাজী রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষায় ‘জার্নি বাই ট্রেন’ দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বোটএর বদলে ট্রেন বসিয়ে চলে এলো। শোনা যায় সেই ট্রেন নদীর ওপর দিয়ে চলতে চলতে একসময় নাকি ডকে এসে থামে। গণিতে কেশব নাগের গুঁতো খেয়ে অনেকেরই নম্বর তৈলাক্ত বাঁশের বানরের মত ওপর নীচে ওঠানামা করতো, তাই ভরসা রাখতে না পেরে তারা জ্যামিতি ঝাড়া মুখস্থ করে পাশের তিরিশ নম্বর তুলে নিতো আর আমিও সেই দলেরই একজন ছিলাম। শুনেছিলাম হোমওয়ার্কএ গরুর রচনায় পাড়ার যমজ ভাইয়ের লেখা হুবহু এক হওয়াতে কানে মোচড় খেয়ে একজন বলেছিল ‘কি করব স্যার বাড়িতে তো ওই একটাই গরু তাই সব এক হয়ে গেছে’। বাড়ি থেকে শিখিয়ে দেওয়া হতো কেউ যেন পরীক্ষায় ফাঁকা খাতা রেখে না আসে কারণ ফাঁকাতে নম্বর দেওয়া সম্ভব নয়। একদিন দেখি আমার পাশে বসা মেয়েটি বিপরীতার্থক শব্দে সদন্তর উল্টো বিদন্ত ভুলে গিয়ে জায়গাটা ফাঁকা না রেখে বড় বড় করে ফোকলা লিখলো। সেই মেয়েটিকেই একবার উত্তমের উল্টো অধম না লিখে ‘সুচিত্রা’ লেখায় তাকে ক্লাস থেকে বার করে দেওয়া হয়। সে যুগে কিশোরী মেয়েদের সিনেমার বই পড়া ছিলো এক বিরাট অপরাধ। একবার মাসীর কাছ থেকে নবকল্লোল এনে লুকিয়ে পড়েছিলাম আর সেই এফেক্টে ক্লাসে ভারতবর্ষ প্রবন্ধের লেখক ‘এস ওয়াসেদ আলী’ ভুলে গিয়ে ‘ওয়াহিদা রহমান’ লিখে এলাম। দুটো নামের প্রারম্ভেই ‘ওয়া’ থাকায় গুলিয়ে গিয়েছিল। মা একটি প্রবল চপোটাঘাত করে বলেছিলেন আমি বিগড়ে গেছি সেটা নাকি উনি অনেক আগেই আঁচ করছিলেন কিন্তু এই ঘটনার পর ওনারা আর পাড়ায় মুখ দেখাতে পারবেন না। সেযুগের মানুষ কামিনী রায় এর কবিতা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ সেই থিওরিতেই বিশ্বাসী ছিলেন।

সে জমানায় শহরতলিতে মশা, চোর আর বেড়াল এই তিনটির বড় উপদ্রব ছিল। মশারা স্তম্ভের আকারে আমাদের কালো মাথাগুলি টার্গেট করে ঘুরতো আর গান গাইবার সময়ে দু একটা সবার পেটেও ঢুকে যেতো। পাশের বাড়ির দুটি বেড়াল বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্র তাদের সেই মহান নামের তোয়াক্কা না রেখে সারা পাড়ায় যথেচ্ছাচার চুরি করে বেড়াতো কিন্তু কিছু বলার উপায় ছিল না কারণ সে জমানায় অতীব চোর বেড়ালদেরও মা ষষ্ঠীর বাহন হিসাবে দেখা হতো। একদিন শুনি নিতু রেগে গিয়ে তার ঠাকুমাকে বলছে রোজ রাতে ওনার বারবার মশারী খুলে কলঘরে যাবার জন্য মশারা বিছানায় ঢুকে তার বেড়ালদের কামড়াচ্ছে ফলে রাতে তাদের অত্যন্ত ঘুমের ডিসটার্ব হচ্ছে। শোনা যায় নিতুর বিয়ের পর তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি নাকি বলেছিলেন তাদের বেড়াল জ্ঞানে যত্ন করতে। একবার আমার খুড়তুতো বোন ঠাকুমার সাথে শুতে রিফিউজ করলো কারণ সে নাকি গভীর রাতে ঠাকুমাকে সামনের দাওয়ায় বসে চোরের সাথে গল্প করতে শুনেছে। তিনি নাকি চোরকে তার ছেলেপুলে কটি, বাড়িতে আর কে কে আছে, সে কোথায় কাজ করে এসব জিজ্ঞাসা করছিলেন। শুনেছিলাম বহুবছর আগে বাড়িতে চোর ঢুকেছিল, জেঠিমা ভয় পেয়ে আমার বাবার ঘরের দরজা ধাক্কিয়ে বলেছিলেন ‘ঠাকুরপো তাড়াতাড়ি ওঠো চোর এসেছে’ আর বাবা তার উত্তরে বলেছিলেন ‘বসতে বলো’। একবার আমাদের নতুন বাড়িতেও চোর ঢোকে, বাবা দেখি সকালে চিৎকার করে বলছেন ‘বাসনগুলো নিলি নিলি ঠিক আছে তাই বলে বাথরুম থেকে জবাকুসুমের শিশিটাও হাওয়া করে দিলি? চোর বলে কি কোনও ক্লাস্ থাকতে নেই’? জেঠুর এক বন্ধুর বাড়িতে চোর নতুন ফ্রিজের মোটর চুরি করতে ঢোকায় বাড়ির বৃদ্ধ বুলডগ খুব বেশি ঝামলায় না গিয়ে আলতো করে চোরের কাঁধে একটি হাত ঠেকায় আর চোর ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে সেই বীভৎস জিভ বার করা মূর্তিটিকে দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার পিতৃদত্ত নাম ভুলে দরজা ধাক্কে বলে ‘বাবু উঠুন আমি চোর’।

এইভাবেই যখন একটু বড় হলাম তখন বাড়িতে এল টেলিভিশন। তখন মাত্র কয়েকটি বাড়ির ছাদেই আন্টেনা শোভা পেতো আর টিভি ছিল সাদাকালো তাও আবার একটি মাত্র চ্যানেল। প্রথমদিনে ‘হরকরকমবা’ দেখেই আনন্দে সবাই লাফিয়ে উঠেছিলাম কিন্তু মুশকিল বাঁধলো শনি রবিবারের সন্ধ্যাগুলিকে নিয়ে। দলে দলে লোক বাড়ির ছাদে আন্টেনা দেখে সিনেমা দেখতে ঢুকতে শুরু করলো আর মেয়েদের চা বিসকুট সার্ভ করতে করতে তাদেরই সিনেমা দেখা মাথায় উঠলো। একে তো সাদা কালো অস্পষ্ট ছবি তাতে আবার ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে দেখা যেতো অনেকসময় গাভাস্কার তথা আরও অনেকের মাথার ডগাটি জাতীয় পতাকার মত ফড়ফড় করে উড়ে চলেছে। পেছন থেকে ইন্সট্রাক্শন আসতো ‘ওরে কাছে গিয়ে একটু অ্যাডজাস্ট করে দ্যাখ্ না রে যদি মাথাগুলো একটু ঠিক হয়’। অনেকসময় কাছে গেলেই ছবি ঠিক হয়ে যেত আর সবাই সমস্বরে বলে উঠতো ‘এইতো এবার একেবারে পাক্কা হয়েছে তুই ঠিক ওইভাবেই সাইড করে দাঁড়িয়ে থাক্ একদম নড়বি না এখন তোর বডিটাই আন্টেনার কাজ করছে’। তবে বেশীক্ষন এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না কারণ দুম করেই লোডশেডিং হয়ে যেতো আর পেছন থেকে হতাশার রব উঠতো -- ‘যা: জ্যোতি বাবু চলে গেলেন'। অচিরেই পাড়ায় একটি দেয়াল লিখন চোখে পড়ল,

এইভাবেই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেলো আমাদের ছেলেবেলার এক অধ্যায়। একদা গাছপালায় ভরা যে শহরতলির ঘাটে মাঠে আমরা খেলে বেড়াতাম আজ সেখানে জায়গা করে নিয়েছে সারি সারি আবাসন। পুরোনো বসতবাড়িগুলি ভেঙ্গে সে জায়গায় আজ দাঁড়িয়ে আছে নতুন নতুন বাড়ি আর সেখানে বাস করে সব নতুন মানুষ। একসময় পাড়া নামক যে শব্দটা ছিল আজ তা চিরতরে হারিয়ে গেছে। বাবা কাকারা বেপাড়ার মানুষদেরও চিনতেন আর এখন পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাস করেও কেউ কারুর খবর রাখে না। পৃথিবী পরিবর্তনশীল আর হয়তো সেটাই স্বাভাবিক। আমার দাদু যিনি কোনদিন প্নেনেই চাপেন নি তিনি আজ বেঁচে থাকলে দেখতেন মানুষ এখন মঙ্গল গ্রহে যাবার চিন্তা করছে আর যখন বারবার হাতল ঘুরিয়ে মিস্ হরিমতির একটি গান শুনতেন আজ তিনি অতি অনায়াসে একটি ছোট ফ্লাশ ড্রাইভে হাজারখানেক গান শুনে নিতে পারতেন। আজ সবার জীবনে স্বচ্ছলতা এসেছে, বাচ্ছারা আর কেউ আমাদের মত একটা ক্যাডবেরি একটু একটু করে ভেঙ্গে দুদিন ধরে খায় না। আজ সবার কাছেই কত দামী দামী খেলনা তবুও মনে হয় তারা আজ বড় একা। পড়াশুনার চাপে কারুরই আর খেলার সময় নেই, এখন বাচ্ছাদের দেখলে রবীন্দ্রনাথের তোতাকাহিনীর কথাই মনে পড়ে। সেই মাঠে ঘাটে সবাই মিলে খেলে বেড়ানো, একসাথে মুড়ি মেখে খাওয়া মায় দুষ্টুমি করলে পাড়ার কাকা জ্যাঠাদের কাছে বকুনি খাওয়া আজ সবই কেমন যেন স্বপ্ন বলে মনে হয়। পা ছুঁয়ে প্রণাম করার মানুষগুলি তো একে একে প্রায় সবাই সেই ঠিকানাবিহীন দেশেই বিচরণ করছেন আর আমরাও যতদিন না সেই পথের পথিক হচ্ছি তারা আমাদের জন্য ফেলে রেখে গেছেন ছোটবেলার কিছু মধুর স্মৃতি।

Full of humour, Srabani Banerjee is an excellent writer. Besides TriState Bulletin, she has huge fan followers at "Amader Chuti" - a Kolkata-based Online Travel magazine. Her published writings are in top publications like, Bartaman Magazine Prakriti, Ananda Bazar, Desh and also in New Jersey-based publication, Anandalipi.

Srabani Banerjee is New Jersey-based.
She can be reached at: s[email protected]

Community Women Recognition
Mitushi Banerjee


Recognizing Mitushi Banerjee
With her team members at SBA (Somerset Bengali Association), Mitushi delivered SBA's consistently high-standard community service with love and respect for community members.

SBA's Saraswati Puja in 2024 had the highest number of attendees - 700+, in the entire TriState and Mitushi gives credit to SBA's team members especially Suchismita Bagchi and Dipanwita Das for dedicated community service.

Closing the bulletin with Kolkata-based
Star Sreetama Baidya

Play Video

Production Team at TriState Bulletin and TriState Glamour

Sushmita Dutta,
Creative Head 


Saraswati Puja Talent Search: বসন্তে বাঙালিয়ানা

Spring is the season that decors nature with colorful flowers and humans rediscover the powerful color within - Love.

Spring is called "Bosonto" in Bengali when the very first celebration is Saraswati Puja on the day of "Bosanto Ponchami" and Bengalis dress especially for the occasion. The video below showcases specially designed outfits by Bengal's famous store for designer clothing - Keya Seth.

The Tagore song in the video প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে means- "Let's get drenched in the stormy waves of Love and never look back again..."

Bosonto Utsav and Celebrities In Bengali Outfit

NJ Community Members in Bengali Outfit

Community goes Creative for Saraswati Puja

ট্রাই স্টেটে সরস্বতী পুজো, ২১ জানুয়ারী থেকে ১৮ ফেব্রূয়ারি
সরস্বতীর আরাধনায় সবাই - সাজে, নাচে., গানে, লেখায় ..

TriState celebrated the 2023 Saraswati Puja from January 21st through February 18th
presenting Creative Arts, Dance, Music, Writings, in outfits especially worn for the occasion

My Goddess Saraswati
By Mili Bagchi

In my deepest invocations,
As my reverend gaze bends at thy feet,
My subdued vacant mind yearns for Sublime rhymes unheard by
The tutored intellect.
I frame my verse by your divine intervention…
As you breathe life into my verse.
An ode is composed
You are cosmic intelligence!
You, the pure thought.
You the phrase.
You the poetry.
What lingers within me is just an emotion(*Bhāva) tears of devotion
flowing each time I inscribe.

*Bhāva (मुख, “mood/state”) refers to “psychological states” devotion to the gods is called bhāva.

Editor's note: "Bhava initiates Bhakti", Devotion that raises the serotonin brain chemistry and creates a good feeling of love and joy. Hinduism mentions "Bhakti Yoga". Prescribed reading: Bhakti Yoga at Vivekananda.net

Winners of Saraswati Puja Programs Contest

Winners of Saraswati Puja Programs Contest

TriState's Talent 2023: Aleena Bhakta Ghosh

Play Video

First Award: $100 Ananda Mandir's Bani Bandana

Aleena Bhakta Ghosh (5) has no formal dance training except she is being trained in Bollywood style dancing since 4 years of age at Shiamak Davar’s dance institute in Jersey City. She gained interest watching her mother Deblina Ghosh dance who was classically trained by Guru Bandana Sen. Aleena's first stage performance was through Shiamak Davar’s summer funk in 2022. She is also musically inclined watching her dad Tirthankar Bhakta sing in couple of events. Aleena is a people person and loves to make new friends.

Captured here some of Aleena's uniqueness over
her performance at Ananda Mandir.

Play Video


The choreographer, Sudipta Bhanja Choudhury has done an incredible job in coordinating dancing where the tiniest kid is just five years old.

Participants:
Aleena Bhakta Ghosh, Anooshka Sen, Rianshi Bhattacharya, Charulata Sengupta, Ritika Sarkar and Kavya Sarkar

Video:
Deblina Ghosh

First Co-Award: $100 : Sur Bijoya

First Award Shared: Nayana Chakraborty jointly with
son Nirnay and daughter Geetaksha

As seen in the picture, the entire home is an abode of Goddess Saraswati. They sing, play multiple instruments and Nayna attained Visharad in Vocal music and instrumental Tabla. She runs a music school "Sur Bijoya" (201-744-4182) and she credits her mother Aparna Chakraborty and husband Gourab Bhattacharya for all she has attained in life including two kids who are musically rich. Their instrumental and vocal performances are included here.

Play Video
Play Video

Second Award: Bengali Club of Princeton Landing
Saraswati Mangalacharan

Play Video

What is amazing about this program which won the prize among many contestants is the choreography conceived and performed within a tiny space with lovely, graceful dancing ignoring the space constraint.

Kudos! Choreographer Kakoli Mukherjee and participants Subhasree Banerjee, Sumilitha Sen and Sumana Ghosh
Video Edits - Subhasree Banerjee
Video credits - Bhaskar Sarkar Ranadeep Mukherjee
Costume And Jewelry -
Kakoli Mukherjee

Third Award: $50 Ishaana Banerjee
Dance at Ananda Mandir and Recitation at PA Club

Play Video
Play Video

A Very,Very Special Recognition
Pratyusha Sarkar, Grade 5, Choreographed her own dance

Play Video

Very Special Recognition

Play Video
Play Video
Play Video
Play Video
Play Video
Play Video

Trinayani, Showcase:
The organization that created Global News

Somerset Bengali Association's
Alladin The Musical: The Best Musical Play

A Very Special Recognition to the team of more than 55 participants.
Watch the Musical in full right here

Play Video

Participants:

Aadrit Banerjee, Aahana Bhaduri, Aarish Mallick,Aarisha Purakayastha,Aaryan Roy, Aditi Dhara, Aditya Saha, Aditya Bhowmick, Ahana Guha, Aira Chakravarty,Aishani Saha,Alina Mukherji,Arihaan Mallick, Arjun Ganguly, Arlyn Guha, Arya Mallick, Aryana Guha, Ashmita Ghosh, Ayush Das, Ayushi Goswami, Boidurjo Bandyopadhyay, Eamon Khan, Evan Roy, Hritam Mookherjee,Indrayan De,Jeet Mazumdar, Mishka Mitra,Naira Banerjee, Nathaniel Dutta,Nayanika Mukherjee,Nirav Banerjee, Pratyusha Das, Raima Bera, Rayirth Ghosh, Reesha Mazumdar, Ria Mukherji, Ridhik Ghosh, ik Mookherjee, Rileena Chowdhury, Rishaan Deb, Riyanshi Bhattacharya, Rohak Majumdar, Roopkatha Bagchi, Ruchika Majumdar,Shaan Sengupta, Shlok Biswas, Shreya Gupta, Shriya Dasgupta, Shriyans Chowdhury, Sohini Maity, Somdeep Nath, Srishti Sengupta, Suhit Basu, Tamoghna Banerjee, Tanmay Singh Bhatyal, Viaan Mitra.

Direction and Script Writing
Mitushi Banerjee and Satabdi Choudhury

Choregrapher: Saheli Bhattacharya
Assistant Choreographers:
Shreya Gupta, Ria Mukherji, Ayushi Goswami, Alina Mukherji
Talent and Back Stage Management:
Doel Ganguly, Mousumi Gupta, Sudipta Banerjee, Dipanwita Das, Tania Ghosh, Aditi Bera, Moumita Bhowmick
Set Creation, Props and Special Effects:
Jayanta Mazumdar, Somesh Choudhury, Siddhartha Maity, Saumitra Bagchi, Sumantra Gupta, Nandini Mazumdar, Pratapaditya Mallick, Prapti Das
Set, Stage and Props Management:
Chanchal Banerjee, Aniruddha Bhowmick, Anindya Bhaduri, Krish Goswami, Arshia Bhowmick, Raika Das, Rohan Ganguly, Soumen Das, Prasenjit Saha
Sound Recording, Lighting and Multimedia Management:
Indranath Bhattacharya, Nipun Banerjee.